১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫

বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ, লোডশেডিং আরও বাড়ার আশঙ্কা

বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ  © সংগৃহীত

উৎপাদন শুরুর দুই দিনের মাথায় আবারও বন্ধ হয়ে গেছে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। এর আগে ১ মাস ৬ দিন বন্ধ থাকার পর গত শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টা ১৭ মিনিট থেকে উৎপাদন শুরু হয়। যা দুই দিন পরেই বন্ধ হয়ে গেল। এতে বিদ্যুৎবিভ্রাটের শঙ্কায় লোডশেডিং আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ৩টি ইউনিটের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ থাকলেও সচল ছিল তৃতীয় ইউনিটটি। যা থেকে প্রতিদিন ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় এবং জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছিল। 

জানা যায়, বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনাল। পাঁচ বছরের চুক্তি মোতাবেক আগামী বছর তাদের মেয়াদ শেষ হবে। চুক্তি অনুযায়ী, এ সময় উৎপাদন সচল রাখতে ছোট মেরামত ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। 

বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটি ও কয়লার খরচ বেশি হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল দুটি ইউনিট। প্রতিটি ইউনিট সচল রাখতে প্রয়োজন দুটি করে ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প। যা ওই ইউনিটের জ্বালানি হিসেবে তেল সরবরাহের মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখে। 

কিন্তু ২০২২ সাল থেকেই তৃতীয়  ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি নষ্ট থাকায় যেকোনো সময় বন্ধের ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প হিসেবে একটি ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প দিয়ে চলে আসছিল এর কার্যক্রম। ফলে মাঝে মধ্যেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হতো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। সর্বশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর মেরামতের মাধ্যমে ইউনিটটি চালু করা হলে দুই দিনের মাথায় সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে আবারও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় সব কার্যক্রম।

জানা যায়, তৃতীয় ইউনিট থেকে বর্তমানে উৎপাদিত ১৯০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছিল। এটি চালু রাখতে প্রতিদিন দুই হাজার ৩০০ মেট্রিক টন কয়লা লাগছে। বড়পুকুরিয়ার তিনটি ইউনিটের মধ্যে ২ নম্বর ইউনিটটি ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে আছে। গেল মাসে তৃতীয় ইউনিট বন্ধ হওয়ায় বিদ্যুৎবিভ্রাট বেড়ে যায়।

ইউনিট দুটি উৎপাদনে না থাকায় পার্বতীপুর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের আট জেলায় চরমভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্নিত হয়। ফলে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এদিকে তৃতীয় ইউনিট চালুর পরই এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১ নম্বর ইউনিট। এই ইউনিটে প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ চলবে। ১ নম্বর ইউনিট থেকে উৎপাদন হতো ৬০-৬৫ মেগাওয়াট। ফলে কয়লার খরচ বেশি হতো।

বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক মুঠোফোনে জানান, প্রতিটি ইউনিটের জন্য দুটি করে ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প থকে। যা ওই ইউনিটের জ্বালানি হিসেবে তেল সরবরাহের মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখে। কিন্তু ২০২২ সাল থেকেই তৃতীয় ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি পাম্প নষ্ট হয়ে যায়। 

এরপর থেকে একটি পাম্প দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছিল। কিন্তু ওই একটি পম্পও সোমবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর দিনব্যাপী চেষ্টা করেও চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে উৎপাদন।একই সঙ্গে তিনি আরও জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। তারা দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছে। বলেছে, চীন থেকে মেশিন এলেই উৎপাদন শুরু করা যাবে