০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১

‘পরশু নয়, কালকেই লং মার্চ টু ঢাকা!’

সমন্বয়কদের সেই ডাক এবং ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ছাত্র-জনতা  © ফাইল ছবি

‘পরশু নয়, কালকেই লং মার্চ টু ঢাকা!’ মাত্র সাতটি শব্দ। তবে এর ক্ষমতা ছিল বিশাল। এ ক’টি শব্দেই বদলে গেছে বাংলাদেশের ইতিহাস। দেশে টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় নিতে হয়েছে এই সাত শব্দের একটি বাক্যের ডাকে। এক দফা দাবিতে সরকার হটানোর পর ছাত্র-জনতা যেটিকে বলছেন, ‘স্বৈরাচারের’ বিদায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়করা সেদিন এ ডাক দেন। পরদিন ৬ আগস্ট এ লং মার্চ হওয়ার কথা ছিল। তবে ৪ আগস্ট পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর গুলিতে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-জনতার মৃত্যু হলে তারা লং মার্চের দিনক্ষণ পরিবর্তন করেন। পরে সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়াসহ অন্যরা এই একটি বাক্য তাদের টাইমলাইনে শেয়ার করেন, ভিডিও বার্তা দেন।

এরপর ৫ আগস্টের ঘটনা তো সবারই জানা। ক্ষমতা ছেড়ে সাবেক প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যান ভারতে। এরপর পার হয়েছে এক মাস। আজ ৫ সেপ্টেম্বর সেই স্ট্যাটাসটাই আবার নতুন করে ভাইরাল হচ্ছে। অনেকে এ বাক্যটি শেয়ার করে একমাস আগে নিজেদের স্মৃতির কথা তুলে ধরছেন।

বেসরকারি গ্রিন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আরিফুজ্জামান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পরশু নয় কালই হবে মার্চ টু ঢাকা। নির্ঘুম সে এক অন্য রাত্রি।’ এতে জানে আলম অপু কমেন্ট করেছেন, ‘একদম স্যার, ১টা সেকেন্ডের জন্য ঘুম আসেনি চোখে। বারবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ভাবতাম সুর্য কেনো ওঠে না, যা কপালে আছে তাই হবে। শেষ লড়াইটা লড়বো। সংকল্পই ছিল মুক্তি অথবা মৃত্যু। এখন পর্যন্ত জীবনের সেরা প্রাপ্তির দিন ৫ আগস্ট ২০২৪।’

সারজিসের সেদিনের সেই স্ট্যাটাসে আজ হাবিবুর রহমান জুয়েল মন্তব্য করেছেন, ‘এটিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলাপানের ব্রেইন, যেটা পাকিস্তানিরাও ধরতে পারে নাই। এবার ভারতও ধরতে পারে নাই।’ আর রিফাত হাসানের মন্তব্য, ‘ঠিক এখন থেকে এক মাস পূর্বে এই রাতটা কিভাবে কেটেছিলো! মনে রাখিস ভাই, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।’

৪ আগস্ট ‘আগামীকালই মার্চ টু ঢাকা। ইতিহাসের সাক্ষী হতে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করুন এখনই। চুড়ান্ত লড়াইয়ে শামিল হোন।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও দেন আসিফ মাহমুদ। এতে মুক্তিকামী জনতাকে ঢাকায় আসার আহবান জানান তিনি। সেই ভিডিও নতুন করে ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুক।

মো. ইকবাল হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ইতিহাসের সেরা সিদ্ধান্ত ছিলো, পরশু নয় কালকেই লং মার্চ টু ঢাকা!’ কাজী ইমাম মেহেদী সোহেল সাত শব্দের সেই বাক্যটিই নতুন করে শেয়ার করেছেন। ইভা জান্নাত এশা স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘পরশু নয়, কালকেই লং মার্চ টু ঢাকা! ২৪ এর স্বাধীনতার সব চেয়ে বড় ডাক। সবাইকে শুভেচ্ছা।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন ধরনের ফেসবুক গ্রুপ ও পেজেই এ নিয়ে শত শত পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। সেখানে অনেকে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছেন।

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণে আজ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) শহীদি মার্চ পালন করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মার্চটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, ধানমন্ডি, সংসদ ভবন, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, শাহবাগ হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে শেষ হবে। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

আরো পড়ুন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘শহীদি মার্চ’ আজ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামীকাল সারা বাংলাদেশে আবারও শহীদ ও আহত ভাইদের স্মরণে এবং তাদের স্মৃতি ধারণ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এই কর্মসূচি পালিত হবে। সেখানে আহত এবং শহীদদের অভিভাবকদেরকেও অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান সমন্বয়করা।

সারজিস বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় ঢাকায় শহীদি মার্চ শুরু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে। এরপর নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট, কলাবাগান, মিরপুর রোড ধরে মানিক মিয়া এভিনিউ ও সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে কর্মসূচি শেষ হবে।