০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:৪৯

৩০০ কলেজের জাতীয়করণ বাতিলের দাবি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের

সংবাদ সম্মেলন  © সংগৃহীত

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ কর্মকর্তারা বহাল কবিয়তে রয়েছেন। তাই শিক্ষা প্রশাসনে থেতে এসব কর্মকর্তাদের দ্রুত বদলির দাবি জানিয়েছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার মর্যাদা রক্ষা কমিটি। এছাড়াও ক্যাডারে বিভিন্ন টায়ারে পদোন্নতি, বদলী ও পদায়ন নীতিমালা, পদ সৃজন,‌ পদ আপগ্রেড, অর্জিত ছুটি ও‌ আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবি জানান তারা।

বুধবার (০৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সংগঠনের সভাপতি এস এম কামাল হোসেন। এ‌ সময় তিনি প্রত্যেক উপজেলায় একটি কলেজ জাতীয়করণের নামে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারি করা ৩০০ কলেজের জাতীয়করণ বাতিলের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহ থেকে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের পদায়নকৃত দলদাস ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ, রাষ্ট্র সংস্কার ও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের দাবি‌ জানান।

এসময় বক্তারা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যয় নিয়ে যে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে তাঁদের অভিনন্দন জানান। এছাড়াও প্রতিটি হত্যার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে তারা এই আন্দোলনে শাহাদত-বরণকারী সকলকে জাতীয় বীরের মর্যাদা, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদদের নাম ও স্মৃতিফলক উন্মোচন, জাতীয় পাঠ্য পুস্তকে এই বিপ্লবী সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট এবং বৈষম্য-বিরোধী আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরে পাঠ্যভুক্ত করার দাবি জানান। 

তারা বলেন, বিভিন্ন দপ্তর থেকে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের রেখে যাওয়া দলদাস ও দুর্নীতিবাজদের অপসারণ করা হলেও শিক্ষা প্রশাসনের সর্বস্তরে তাঁরা এখনও বহাল তবিয়তে। এজন্য তাঁদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে বিগত স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীদের আবারো লাভজনক পদে পদায়ন শুরু হয়েছে, যা বৈষম্য-বিরোধী আন্দোলনের চেতনা বিরোধী। তাই অবিলম্বে মন্ত্রণালয়ের কলেজ উইং এবং শিক্ষা প্রশাসনের সকল স্তর ঢেলে সাজাতে হবে।

পদোন্নতি-যোগ্য সবাইকে সকল টায়ারে যথা- অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পদে একসাথে পদোন্নতি প্রদান করা, পূর্বে তিন টায়ারে একসাথেই পদোন্নতি দেওয়া হতো। কোনো কারণ ছাড়াই দীর্ঘদিন পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। ১৬’শ বিসিএসের কর্মকর্তা দীর্ঘ ২৮ বছর চাকরি করে পদোন্নতি না পেয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদ থেকে অবসরে যাচ্ছেন যা খুবই কষ্টকর। আমরা ১৬ ব্যাচের কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষিকভাবে মার্চ ২০২৩ থেকে পদোন্নতির দাবি করছি। 

তারা আরও বলেন, শূন্য পদ না থাকার অজুহাতে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদেরকে পদোন্নতি বঞ্চিত রাখা হচ্ছে অথচ প্রশাসন ক্যাডারসহ অনেক ক্যাডারে সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি দেওয়া হয়। শিক্ষা ক্যাডারের ক্ষেত্রেও সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিয়ে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের করতে হবে। 

শিক্ষা ক্যাডারে বদলি-পদায়নের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য বিদ্যমান। নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষক-কর্মকর্তা ঘুরে-ফিরে মাউশি, ডিআইএ, ব্যানবেইস, নায়েম, শিক্ষাবোর্ড, এনসিটিবিসহ বিভিন্ন দফতর এবং ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলার প্রধান কলেজগুলোতে কর্মরত আছেন। অপরদিকে সৎ, যোগ্য, দক্ষ, নিরীহ শিক্ষক-কর্মকর্তাগণ প্রত্যন্ত অঞ্চল, হাওড়-দ্বীপ, পাহাড় এবং  জেলা-উপজেলার ছোট কলেজে কর্মরত আছেন। এই বৈষম্য নিরসনে অবিলম্বে সুষ্ঠু বদলি পদায়ন নীতিমালা জারি করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এই বিপ্লবী সরকারের সময়ও বিগত সময়ের সুবিধাভোগীরা নতুন করে ভালো পদায়ন পাচ্ছেন বা পূর্বের পদায়ন ধরে রেখেছেন।

শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরকে ৫ম গ্রেড থেকে ৩য় গ্রেডে পদোন্নতি প্রদান এবং আনুপাতিক হারে গ্রেড-২ ও গ্রেড-১ পদ সৃষ্টি করে ৬ স্তরের পদসোপান তৈরি করার দাবি জানান তারা। 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন এসোসিয়েশন এর প্রাক্তন সহ-সভাপতি সংগঠনের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আ জ ম রুহুল কাদীর। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি এস এম কামাল আহমেদ, প্রফেসর মোহাঃ আবেদ নোমানী, প্রফেসর কাজী ফারুক আহম্মদ, প্রফেসর ড. ছদরুদ্দীন আহমদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন, আকলিমা আক্তার, এনামুল হক, ইমরান আলী, কামরুল হাসান, ড. সালাহ উদ্দিন আফসার, গোলাম আজম প্রমুখ।