০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫:৩২

পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা করার চেষ্টা করছে ভারত; শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি 

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ বা ‘সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শিক্ষার্থীসমাজ’ এর ব্যানারে প্রতিবাদী সমাবেশ  © টিডিসি ফটো

ভারতীয় উস্কানীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাষ্ট্র তৈরীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির ব্যানারে শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ বা ‘সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শিক্ষার্থীসমাজ’ এর ব্যানারে এক প্রতিবাদী সমাবেশে এমন হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন শিক্ষার্থীরা। 

স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি' প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মুহম্মদ জিয়াউল হক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্মল্যান্ড বানাতে ভারতীয় মদদে উপজাতিদের ‘আদিবাসী’ বলে জোর প্রচারণা চলছে। উপজাতিদের উস্কানি দেয়া হচ্ছে 'আদিবাসী' স্বীকৃতি আদায়ের জন্য। অথচ পাহাড়ের উপজাতিরা কেউ আদিবাসী নয়, তারা অভিবাসী।

তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে ভারত, মায়ানমার ও তিব্বত থেকে বাংলাদেশে অভিবাসন করে এসেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দখলদার যারা দস্যুবৃত্তি করতে করতে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে জোর করে বাঙ্গালীদেরকে ভূমিচ্যূত করে দখলদারিত্ব চালিয়েছে। আবার কেউ বা আশপাশের অঞ্চল থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। 

জিয়াউল হক আরও বলেন, কাজেই উপজাতিদের ‘আদিবাসী’ দাবী করা কিংবা সম্বোধন করা মানে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করা, যা অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহিতা। বাংলাদেশের কেউ যদি এমন প্রচারণায় অংশ নেয়, তবে সে অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধে অপরাধী হবে, তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। 

'স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি' প্ল্যাটফর্মের যুগ্ম আহ্বায়ক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহম্মদ মুরসালীন বলেন, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো রাজার শাসন চলতে পারে না। পাহাড়ে জমি ক্রয় করতে গেলে চাকমা, বোমাং ও মং রাজাকে খাজনা দিতে হয়। এক বাংলাদেশে দুই নিয়ম কেন? মুহম্মদ মুরসালীন পাহাড়ে কথিত রাজাদের খাজনা দেয়া বন্ধের দাবী তোলেন। 

স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি' প্ল্যাটফর্মের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি মশিউর রহমান বলেন, পাহাড়ে খ্রিস্টান মিশনারীরা একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। তারা উপজাতি গোষ্ঠীগুলোকে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করে পাহাড়ে খ্রিষ্টান ধর্মের আধিক্য দেখাতে চায়‌। এর সাথে বেশ কিছু এনজিও রয়েছে যারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদেরকে 'আদিবাসী' প্রচারণার সবক দিয়ে থাকে ও সম্বোধন করে থাকে। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহম্মদ শাহীন বলেন, পাহাড়ে উপজাতি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি নিরীহ বাঙালীকে হত্যা করেছে।  রাজনগর গণহত্যা, পাকুয়াখালী ট্রাজেডি, মাটিরাঙ্গা গণহত্যা, ভূষণছড়া গণহত্যার ইতিহাস এখনও জনগণ ভুলে যায়নি। এখনও পাহাড় সেই সকল শহীদদের গণকবরের ওজন বহন করে। আমরা এই সব নৃশংস গণহত্যার বিচার চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই। এখনো ভারতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। এগুলো বন্ধ না হলে ভারতকে অবশ্যই তার ফল ভোগ করতে হবে। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন বলেন, আমার বাংলাদেশকে জুম্মল্যান্ড-কুকি চীন হতে দেবো না।  ভারত আমাদের পাহাড়ে চোখ দিলে, তার মুরগীর গলা (চিকেনস নেক) চেপে ধরবো। পাহাড়কে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র হলে চিকেনস নেক দিয়ে তারাও দুই টুকরা হয়ে যাবে। জসিম উদ্দিন পাহাড়ে ষড়যন্ত্র রূখে দিতে সেনাবাহিনীকে শক্ত ভূমিকা নেয়ার দাবি তোলেন। তিনি পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প আরো বৃদ্ধি করার আহবান জানান। 

প্রতিবাদী সমাবেশজুড়ে নানান রকম প্ল্যাকার্ড হাতে শিক্ষার্থীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। কিছু প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল: কেউ নয় আদিবাসী, সবাই আমরা বাংলাদেশী; সমতল ও পাহাড় এক আইনে চলতে হবে; পাহাড়ের বাঙ্গালীদের সাথে সকল বৈষম্য বন্ধ করো; ঢাবিতে উপজাতি কোটা বন্ধ করো, নাথান বোমরা ঢুকছে ইত্যাদি। 

প্রতিবাদী সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।