০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৪

মা আমার জন্য কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিলেন: আমান আযমী

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী  © সংগৃহীত

আমার মা আমার জন্য দিনরাত কাঁদতেন। পৌনে তিন বছর মা আমার জন্য কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে আমাকে না দেখেই দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। আমার বাবা মারা গেছেন। জালেমরা আমার বড় পাঁচ ভাইকে আসতে দেয়নি। আমার মা মারা গেছেন, ছয় ছেলের একজনও সামনে ছিল না। আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়, আর যেন কোনো মাকে এভাবে কাঁদতে না হয়, আপনারা এর ব্যবস্থা করেন।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ‘আয়না ঘরের’ নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে কেঁদে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে এভাবে কথাগুলো বলেন সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী।

তবে আমান আযমী প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সশরীরে উপস্থিত হননি। তিনি অনলাইনে ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন।

দীর্ঘ ৮ বছর গুম থাকার পর গত ৭ আগস্ট মধ্যরাতে পরিবারের কাছে ফিরেছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আজমের মেজো ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী।

আমার পরিবারের ওপর হামলা হয়
সংবাদ সম্মেলনে আমান আযমী বলেন, ‌যখন আমার বাসায় তারা আসল, তখন তাদের কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম আপনারা কারা, পরিচয় কী, পরিচয়পত্র দেখান। তারা আমার কথার জবাব দেননি। আমি বেশ কিছু প্রশ্ন করেছি, তারা কোনো কথার জবাব দেননি। এক অফিসার আমাকে 'তুই' করে সম্বোধন করে। আমার সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করে। একপর্যায়ে আমাকে গ্রেফতার করে গাড়িতে নিয়ে চোখ বেঁধে দেয়। সে সময় আমাকে ও সেনাবাহিনীকে নিয়ে খুবই খারাপ ব্যবহার করে।

আমার স্ত্রীকে তুলে নিতে চাইল
আযমী বলনে, ‌আমি ফিরে এসে জানতে পারলাম আমার পরিবারের ওপর তারা কী পরিমাণ নির্যাতন চালিয়েছে। আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে চেয়েছিল তারা। একপর্যায়ে আমার স্ত্রীকে তুলে নিতে চাইলে স্ত্রী আমার মাকে সঙ্গে নিতে বলে তখন তারা তাকে নেয়নি। এ সময় আমার বাড়ির যুবতী কাজের মেয়ের ওপর হাত চালিয়েছে। বাসার ম্যানেজার-দারোয়ানসহ সবার ওপর তারা হামলা চালায়।

তিনি বলেন, আমার চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় একটা জায়গায় নিয়ে গেল। তারা আমাকে পোশাক দিল। রাতের আমাকে খাবার দেয় কিন্তু খাওয়ার মতো অবস্থায় ছিলাম না। টয়লেট যেতে চাইলে তারা আমার চোখ-হাত বেঁধে নিয়ে যেত। প্রায় ৫০ কদম হাঁটার পর টয়লেটে যেতাম।

লাশ যেন আমার পরিবারের কাছে যায়
সাবেক এই ব্রিগেডিয়ার বলেন, বারবার মনো হতো তারা হয়তো আমাকে ক্রসফায়ার করে হত্যা করবে। আমি রাতে তাহাজ্জুত পড়ে আল্লাহর কাছে শুধু কান্না করতাম, আল্লাহ আমার লাশটা যেন কুকুরদের খাদ্যে পরিণত না হয়। আমার লাশটা যেন আমার পরিবারের কাছে যায়। সব সময় এ দোয়াই করতাম।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যে আহ্বান
অন্তর্বর্তী সরকারকে আযমী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার সফল বিপ্লবে নতুন বাংলাদেশ আমাদের জন্য বিপুল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। বর্তমান সরকারের প্রতি আমার কয়েকটি আবেদন, সকল খন, গুম, রাহাজানি, নিপীড়নকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। ভবিষ্যতে যেন আর এসব অন্যায়-অপরাধ আর কেউ করতে না পারে। দয়া করে সুশাসন, আইনের শাসন, বাকস্বাধীনতা, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, সুদৃঢ় মানবাধিকার নিশ্চিত করে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলুন, আমার এটা দোয়া।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট রাতে আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে তুলে নেওয়া হয়। সে সময় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর বড় মগবাজারের বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাকে আটক করা হয়।