২৮ আগস্ট ২০২৪, ০৮:০২

জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে শ্রেণি কার্যক্রম

জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে শ্রেণি কার্যক্রম  © সংগৃহীত

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার আটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে। প্রতি বছর বিদ্যালয় ভবনে শুধু চুনকাম করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। এমনকি বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে টিনশেড ঘরও নির্মাণ করা হয়নি কোনো বিদ্যালয়ে।

ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ায় ব্যবহার অযোগ্য এসব ভবনে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। প্লাস্টারের পাশাপাশি দরজা জানালার গ্রিলও খসে পড়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

এমনিতেই বিভিন্ন কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। এই ৮ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ভয়াবহ আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।কোনো কোনো বিদ্যালয় বিকল্প ব্যবস্থা নিলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে জরাজীর্ণ ভবনে। কারণ তাদের বিকল্প কোনো ভবনও নেই। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যেও বিরাজ করছে হতাশা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস চালিয়ে যাওয়া বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে মাচিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উজিয়াল পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ চৌকিধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ হাদিয়া মালেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুরচাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দীগর সইলাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গগডা কোনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

জানা যায় এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় আছেন। এসব জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ  বিদ্যালয় ভবনে ছাদের পলেস্তরা নেই। মরিচাযুক্ত রড ফেটে ফেটে পড়ছে। নিরাপত্তা পিলারের ইট সুরকি খসে ভেতরের রড বেরিয়ে গেছে। কিছু কিছু বিদ্যালয়ের জানালা নেই, মরিচা ধরে ভেঙে পড়ে রয়েছে। 

কামার গাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ পাকা ভবনটি ১৯৯৯ সনে পাকা করন করা হয়। সেখানে রয়েছে চারটি রুম।একটি রুম ঝুঁকিপূর্ন হওয়ায় তালাবদ্ধ রয়েছে। ফলে শ্রেণিকক্ষ ও অফিস কক্ষের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। 

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমন, ইমা, ইভা, সিয়াম জানায়, শ্রেণী কক্ষের সঙ্কট থাকার কারণে বিদ্যালয়ে কষ্ট করে এক রুমে দুই ক্লাস করতে হচ্ছে। স্কুল খোলা থাকা অবস্থায় শ্রেণি কক্ষের ছাদ থেকে পলেস্তারা শরীরের উপর পড়েছে কয়েকবার। তাই ভয় হয় সবার।কখন যে দূর্ঘটনা ঘটে। এখানে নতুন ভবন নির্মাণ হলে আমাদের আর কষ্ট হবে না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, এই বিদ্যালয়ে ৮৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন চার জন।বিদ্যালয় ভবনের অবস্থা মোটেও ভালো না। সিমেন্ট উঠে যাচ্ছে। দেয়াল ও ছাদের ফাটল গুলো দিন দিন বড় হচ্ছে।  ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ভবনটি। একটা ভবন খুবই দরকার।

উপজেলা সহকারী  শিক্ষা কর্মকর্তা মির্জা মোহাম্মদ জানান, আমিও শোনেছি ভবনটি অনেক ঝুকিপূর্ণ।আমরা  বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাব, যদি পরিত্যক্ত করার উপযোগী মনে হয় তা হলে পরিত্যক্ত করা হবে। আর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চলমান থাকলেও বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।

মাচিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক আব্দুল হেলিম শেখ জানান, ভবনটি চার কক্ষবিশিষ্ট। শিক্ষক রয়েছেন ছয় জন। শিক্ষার্থী রয়েছে ১৯৮ জন। বর্তমানে ভবনটি খুব জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কষ্ট করে ক্লাস চালাতে হচ্ছে। এতে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালাতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান তিনি।

উপজেলা প্রাথমিক  শিক্ষাকর্মকর্তা( ভারপ্রাপ্ত) আমিনুল ইসলাম সোমবার (২৬ আগষ্ট) বলেন, কেন্দুয়া উপজেলায় ১৮২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা  খুবই জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। জরাজীর্ণ এসব বিদ্যালয় ভবনে পাঠ দান করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়াতে যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই এই সকল বিদ্যালয় গুলোতে যতদ্রুত সম্ভব নতুন ভবন নির্মাণ করা জরুরি।