বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ২৩, ক্ষতিগ্রস্ত ৫৭ লাখ বানভাসি মানুষ
দেশে চলমান বন্যায় ১১ জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জন। সোমবার (২৬ আগস্ট) বেলা ১১টা পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে—বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সব নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সোমবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। উজানে নদ-নদীর পানি কমার ধারা অব্যাহত আছে। ফলে বর্তমানে ফেনী ও কুমিল্লা জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে।
একই সঙ্গে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ সময়ে এ অঞ্চলের কুমিল্লা জেলার গোমতী নদীর পানি কমতে পারে এবং এ অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। একই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনী জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। তবে কোনও কোনও স্থানে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
আরও পড়ুন: বানের পানিতে তলিয়েছে লক্ষ্মীপুরের ৫ উপজেলা, পানিবন্দি ৬ লাখ মানুষ
সোমবারের বন্যার সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালায় জানায়, বন্যায় দেশের ১১ জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮টি পরিবার।
দেশের ১১টি জেলার ৭৪ উপজেলা, ৫৫০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা বন্যা প্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ২৩ জন, এরমধ্যে কুমিল্লায় ছয়, ফেনীতে এক, চট্টগ্রামে পাঁচ, খাগড়াছড়িতে এক, নোয়াখালী পাঁচ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক, লক্ষ্মীপুরে এক এবং কক্সাবাজারে তিন জন। নিখোঁজ রয়েছেন মৌলভিবাজারের দুই জন। পানিবন্দি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩ হাজার ৮৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৩ জন এবং ২৮ হাজার ৯০৭টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়। ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ৬৪৫টি মেডিক্যাল টিম চালু রয়েছে।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে জানিয়ে মন্ত্রণালায় বলছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১১ জেলায় মোট ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন চাল, ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার, ৩৫ লাখ টাকার শিশুখাদ্য এবং ৩৫ লাখ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে।
রবিবারের তথ্য অনুযায়ী—বন্যায় মোট মৃতের সংখ্যা ছিল ২০ জন। আর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫২ লাখ।