টানা ১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত হলো সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
চাকরি জাতীয়কারণের এক দাবি নিয়ে আনসার সদস্যদের আন্দোলনে টানা ১০ ঘণ্টা পর অবরুদ্ধ মুক্ত হলো সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে আনসার সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার পর সচিবালের গেটগুলো খুলে দেওয়া হয়। এরপর বের হতে থাকেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আজ রবিবার (২৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষার্থী ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় সচিবালয়ের গেট খুলে দেওয়া হয়।
জানা যায়, টানা ১০ ঘণ্টা সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ রাখা হয়। এরপর ছাত্র-জনতার ও প্রশাসনের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে পালাতে শুরু করে আনসার সদস্যরা। প্রথমদিকে দুই পক্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হলেও এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে সকাল ১১টা থেকে সচিবালয়ের সবগুলো গেট বন্ধ করে সচিবালয়কে কার্যত অকার্যকর রাখা হয়। এক পর্যায়ে দুপুর ১২টা থেকে তারা সচিবালয়কে অবরুদ্ধ করে রাখে। এরপর দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনের একাংশ সচিবালয়ের তিন নম্বর গেট দিয়ে সেনাবাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে ভেতরে প্রবেশ করে স্লোগান দেন। কিছুক্ষণ পর তাদের জোর করে বের করে দেওয়া হয়। এরপর সবগুলো গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকেল ৫টার দিকে অফিস ছুটি হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বের হতে পারছেন না।
এদিকে, অবরুদ্ধ থাকা অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়েছেন। সচিবালয়ের ভেতরে থাকা ক্যান্টিনগুলো খালি হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলছেন, বাসায় গিয়ে রান্না করার প্রয়োজন। অনেকের বাসায় ছোট বাচ্চারা রয়েছেন। তাদের পরিবার চিন্তায় আছেন।
এদিকে, রবিবার চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন তারা। এক পর্যায়ে দুপুরে ১টার দিকে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েছেন বিক্ষোভকারী আনসারদের একাংশ। তারা সচিবালয়ে ৩ নম্বর গেট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে ঢুকে পড়েন। অর্ধশতাধিক আনসার ঢুকে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গেটটি দ্রুত বন্ধ করে দেয়। আনসাররা ভেতরে ঢুকে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তারা বলছেন, হয় আমাদের চাকরি জাতীয়করণ করেন, না হয় আমাদের মেরে ফেলেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার। তাদের আশ্বাস দেওয়ার পরও চাকরি জাতীয়করণ করা হয়নি। দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত সচিবালয় থেকে কাউকে বের হতে দেবেন না এবং কাউকে প্রবেশ করতে দেবেন না বলেও ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী আনসাররা।
রবিবার রাতে সচিবালয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা- কর্মচারীরা বলেন, সেই সকালে অফিসে এসেছি। এখন রাত সাড়ে ৮টা বাজে। এখনও বাসায় যাওয়ার জন্য বেরই হতে পারিনি। দুপুরে খাবার খাওয়ার পর আর কিছু খাইনি। ক্যান্টিনগুলোও সব ফাঁকা হয়ে গেছে। আমরা অনেক ক্ষুধার্ত। এভাবে আন্দোলনের নামে আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখার কোনো মানেই হয় না। তাদের দাবি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। তাহলে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকেও কেন অবরুদ্ধ করে রাখল? এমন চিত্র আগে কখনও দেখিনি।
এদিকে, সন্ধ্যায় সচিবালয়ের পেছনের ওয়াচ টাওয়ার দিয়ে উঁচু দেয়াল টপকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যসহ কয়েকজনকে বের হতে দেখা গেছে। পরে অবশ্য আনসার সদস্যরা আর কাউকে বের হতে দেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এপিবিএনের একজন সদস্য বলেন, সকাল থেকেই ডিউটি করছি। সারাদিন খাবার খাইনি। এখন বাধ্য হয়ে দেয়াল টপকে বের হব।
রেজওয়ান নামের এক কর্মচারী বলেন, কখন বের হতে পারব জানি না। এ এক অনিশ্চিত বিষয়। আমরা সকাল থেকে বন্দি। ভেতরে পর্যাপ্ত খাবার নেই। বাধ্য হয়ে দেয়াল টপকে বের হব।