বন্যায় বড় ধাক্কা রোপা ও বোনা আমন উৎপাদনে
উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণে হবিগঞ্জে এক হাজার ৯৪৫ হেক্টর বোনা আমনের জমি তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি নামতে বেশি বিলম্ব হলে এসব জমির ধানগাছ পুরোপুরিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকবে। আকস্মিক বন্যায় বড় ধাক্কা লেগেছে হবিগঞ্জের রোপা আমনেও। বীজতলায় পানি উঠে চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন বিপর্যয়ের হতে পারে।
জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় চলতি আউশ মৌসুমে ১৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি বোনা হয়। এখন ধানগাছগুলোতে চাল হওয়ার সময় চলছে। এরই মধ্যে কয়েকদিনের বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে উপজেলায় এক হাজার ৮৮০ হেক্টর আউশ তলিয়ে গেছে। সদর উপজেলায় ২৮ এবং বাহুবল উপজেলায় আরও ৩৭ হেক্টর পানির নিচে।
আউশ মৌসুমে জেলার নয় উপজেলায় চাষ হওয়া ৫২ হাজার হেক্টর বোনা আমন থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ২৮০ টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে এক হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। হাওরে পানি বাড়তে থাকা অব্যাহত থাকলে বাকি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার পূর্বাভাস দেয়নি কোনও পক্ষ
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে—আউশের ধানগাছে এখন চাল তৈরি হচ্ছে। জমি থেকে পানি নামতে বিলম্ব হলে বড় রকম ক্ষতি হবে। তবে দ্রুত পানি নেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না। এদিকে জেলায় এবার রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৮৮ হাজার ৩১০ হেক্টর। এর মধ্যে ২৬ হাজার ৪৯৬ হেক্টর চাষ হয়েছে তার মধ্যে ছয় হাজার ৭২৭ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চুনারুঘাট উপজেলা। সেখানে তলিয়ে যাওয়ার পরিমাণ পাঁচ হাজার ৩১০ হেক্টর।
বন্যার বড় প্রভাব পড়েছে রোপা আমনের বীজতলায়। লক্ষ্যমাত্রার চার তৃতীয়াংশ জমি এখনো আবাদের বাকি। প্রস্তুত করা বীজতলা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। জেলার নয় উপজেলায় চার হাজার ৪২৬ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭৩ হেক্টর পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী। হাওরে পানি বেড়ে বীজতলা নষ্ট হলে রোপা আমন হুমকির মুখে পড়তে পারে।
আরও পড়ুন: তীব্র স্রোতে সেতুতে ধস, যোগাযোগ বন্ধ আখাউড়া-কসবা সড়কে
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় এখন পর্যন্ত এক হেক্টর জমিতেও চারা রোপণ করা হয়নি। এর আগেই ৩৮৮ হেক্টর বীজতলা থেকে ৫৭ হেক্টর তলিয়ে গেছে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, আমরা বীজতলা করেছিলাম। বন্যার পানিতে সেগুলো তলিয়ে গেছে। এখন দ্বিতীয়বার বীজতলা তৈরির সময়ও নেই। আমাদের জমিগুলো চাষ করতে পারব কি-না এ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয়বার বীজতলা তৈরি করে ধান চাষ করলেও তা পিছিয়ে যাবে। পরে একই জমিতে বোরোর আবাদ পিছিয়ে পড়বে। ফলে চাষাবাদে পানি সংকট হতে পারে এবং ধান পাকার আগেই বন্যার কবলে পড়তে পারে বলেও শঙ্কা তাদের।