ভারত না জানিয়ে বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশে বন্যা ‘বিপর্যয়কর’
হঠাৎ বন্যায় আটটি জেলার প্রায় ২৯ লাখ মানুষ ক্ষত্রিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকেই নিখোঁজ আছেন। অনেকে পাচ্ছেন না পরিবারের খোঁজ। এমন পরিস্থিতিতে সতর্কতা না দিয়ে বাঁধ খুলে দেয়ার মাধ্যমে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছে অন্তবর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। আর নদী গবেষক শেখ রোকনের মতে, সতর্ক না করে ড্যাম খুলে দেয়ায় বাংলাদেশে প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ পায়নি। তাই হঠাৎ এ বন্যা বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন : বাঁধ খুলে দিয়ে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে : নাহিদ
নদী গবেষক শেখ রোকন গণমাধ্যমকে বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে ডুম্বুর ও কলসি ড্যাম ও ব্যারাজের গেট খোলার তথ্য জানায়নি। ভারত যেটা জানিয়েছে, সেটা হলো বৃষ্টিপাত ও বন্যার তথ্য। অভিন্ন নদী অববাহিকায় বৃষ্টিপাত ও বন্যার তথ্য পরস্পরকে জানানোর বিষয়ে ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের চু্ক্তিও রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের তথ্য চীন আমাদের জানিয়ে থাকে। আবার আত্রাই বা পুনর্ভবা নদী অববাহিকার দিনাজপুর বা ঠাকুরগাঁওয়ে অতিবর্ষণ বা বন্যা হলে আমরা ভারতকে সতর্ক করি, যাতে করে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর বা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রস্তুতি নিতে পারে। এ ক্ষেত্রেও ভারত ত্রিপুরায় অতিবৃষ্টিপাত ও বন্যার তথ্য জানিয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে ডুম্বুর ও কলসি ড্যাম ও ব্যারাজের গেট খোলার তথ্য জানায়নি। ভারতীয় পররাষ্ট্র বা আবহাওয়া দফতরও সেটা দাবি করেনি। এই যে ড্যাম বা ব্যারাজের গেট খোলার তথ্য জানায়নি, সেটাই বন্যাটিকে বিপর্যয়কর করে তুলেছে।
আরও পড়ুন : ৩১ বছর পর ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ার আগে বাংলাদেশকে সতর্ক করেনি ভারত
যেকোনও যৌথ নদীর বাঁধ খুলে দেওয়ার আগে অন্য দেশকে জানানোর রীতি আছে। অনেকে বলছেন, হাইড্রোপাওয়ারে গেট থাকে না, যেটা খুলে দিতে হবে। ওই ক্ষেত্রে লেক পূর্ণ হয়ে পানি উপচে বের হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে তা সত্য। ডুম্বুর খুব ছোট হাইড্রোপাওয়ার, গোমতি নদীর ১২৩ কিলোমিটার উজানে এই হাইড্রোপাওয়ার। হঠাৎ টানা বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়েছে। তিন দিন আগে ভারতের যে পূর্বাভাস, তার চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন : বন্যার্তদের জন্য টিএসসিতে চলছে গণত্রাণ সংগ্রহ
এ ধরণের বক্তব্য যাচাইযোগ্য বলে উল্লেখ করে শেখ রোকন বলেন, ড্যামের ক্ষেত্রে সেটা হতে পারে, যেমন- ডুম্বুর। কিন্তু সেটা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে। বন্যা ও অতি বৃষ্টির ক্ষেত্রে শুধু স্পিল ওভার দিয়ে চলবে না। ফলে ওনার এমন বক্তব্য যাচাইযোগ্য। আর ব্যারাজের ক্ষেত্রে গেট খুলতেই হবে। যেমন মুহুরির কলসি ব্যারাজ।
যদিও গতকাল বুধবার সকালে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের তিনটি বাঁধ বা গেইটের একটি বুধবার সকালে খুলে দেয়া হয়েছে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বুধবার (২১ আগস্ট) তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে গোমতী জেলায় রাজ্যের একমাত্র পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের ডুম্বুর জলাধারে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পানি জমা হয়ে পড়েছে, তাই যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে; এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় এলাকায় আগাম ঘোষণা দিয়ে জলাধার কর্তৃপক্ষ স্লুইস গেট খুলে বাড়তি পানি ছেড়ে দিয়েছে। এর ফলে গোমতী ও সিপাহীজলা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘর ও কৃষি জমিতে ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি ত্রিপুরার গোমতী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তার অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে গতকাল বুধবার জানিয়েছেন, গোমতী নদীর পানি আরও বাড়তে পারে। এ কারণে ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ থেকে পানি ছাড়তে হবে। বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত বাঁধের তিনটি গেটের মধ্যে একটি খুলে দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরায় উৎপত্তি হওয়া গোমতী নদী প্রায় ১৫০ কিলোমিটার অতিক্রম করে কুমিল্লার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ফলে ডুম্বুর বাঁধের গেট খুলে দেওয়ায় হু হু করে পানি ঢুকছে কুমিল্লা অঞ্চলে।
প্রসঙ্গত, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এক তথ্য বিবরণীতে জানায়, বন্যায় আটটি জেলার প্রায় ২৯ লাখ মানুষ ক্ষত্রিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানানো হয়। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর সংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীগুলোর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীল থেকে পরবর্তী সময়ে উন্নতি হতে পারে।