১০ আগস্ট ২০২৪, ০৭:১৫

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি, এখনও বৈধ প্রধানমন্ত্রী: রয়টার্সকে জয়

শেখ হাসিনা ও হাসিনাপুত্র জয়  © সংগৃহীত

ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে দেশছাড়া সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি বলে দাবি করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, সংবিধান অনুযায়ী তার মা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার মা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্যাক করারও সময় পাননি। তিনি পদত্যাগ করেননি। যে কারণে আইন অনুযায়ী তিনিই বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী।

শনিবার (১০ আগস্ট) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন দাবি করেন।
 
জয় দাবি করেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) একটি বিবৃতি দেয়ার এবং পদত্যাগ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তারপরে বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করে, তখন সময় ছিল না। আমার মা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্যাক করারও সময় পাননি। সংবিধান মতে, তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’

জয় জানান, প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করা সত্ত্বেও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়াকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে। শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকারের মেয়াদ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

তবে আগামী তিন মাসের ভেতর বাংলাদেশে নির্বাচন দেখতে চান জয়। যেখানে অংশ নেবে আওয়ামী লীগও। আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে জানিয়ে জয় বলেন, সেটা না হলে আমরা বিরোধী দল হব। যেটাই হোক ভালো হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগকে প্রয়োজন উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘আমাদের সাহায্য ছাড়া, আমাদের সমর্থক ছাড়া আপনারা বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনতে পারবেন না।’ 

‘বৈধ প্রধানমন্ত্রীকে’ বাদ দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া আদালতে চ্যালেঞ্জ করার মতো জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যদিও প্রেসিডেন্ট সামরিক প্রধান ও বিরোধী রাজনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনকে ‘আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে’।
 
ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর বিষয়ে সাক্ষাৎকারে জানতে চাওয়া হলে জয় দাবি করেন, তার মা শেখ হাসিনা গুলি চালানোর কোনো নির্দেশনা দেননি। তার মতে, সরকার একটি বড় বিষয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর পক্ষে ছিলেন না। যে বা যারা গুলি চালিয়েছেন তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান জয়।
 
তিনি বলেন, ‘পুলিশ সহিংসতা বন্ধ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু কিছু পুলিশ অফিসার অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে।’ এ সময় গণতন্ত্র রক্ষা এবং দেশকে স্থিতিশীল করতে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। আমি নিশ্চিত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। না হলেও আমরা বিরোধী দল হবো। যেভাবেই হোক ভালো।

সাক্ষাৎকারে দল এবং দেশের জনগণ চাইলে মায়ের অবসরের পর আওয়ামী লীগের হাল ধরতে পারেন বলে জানান জয়। তিনি বলেন, দল যদি আমাকে চায়, আমি অবশ্যই বিবেচনা করব। আরেক প্রশ্নে জয় বলেন, যখন ইচ্ছা তিনি দেশে ফিরতে পারেন। তিনি কখনও কোনো অন্যায় করেননি জানিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, তাহলে আমি দেশে ফিরতে চাইলে কেউ ঠেকাতে যাবে কেন?

শেখ হাসিনা দেশে ফিরে যেকোনো বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত বলেও জানান জয়। তিনি বলেন, গ্রেফতারের হুমকিতে আমার মা আগে কখনো ভয় পাননি। আমার মা কোনো অন্যায় করেননি। শুধু তার সরকারের লোকেরা বেআইনি কাজ করেছে, তার মানে এই নয় যে, আমার মা আদেশ দিয়েছেন এবং এজন্য তিনি দায়ী।
 
এ সময় শেখ হাসিনার প্রতি কোনো প্রতিশোধ না নেয়ার বিষয়ে দেয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যকেও স্বাগত জানান জয়। তিনি বলেন, ‘আমি খালেদা জিয়ার বিবৃতি শুনে খুব খুশি হয়েছি, আসুন অতীত ভুলে আগামীর পথে হাঁটি। আমরা যেন প্রতিহিংসার রাজনীতি না করি। আমাদের এখন একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’