০৭ আগস্ট ২০২৪, ১৮:২৫

আলোচিত এই আয়নাঘর কী?

আয়নাঘর  © সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাউন্টার-টেরোরিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (সিটিআইবি) দ্বারা পরিচালিত একটি গোপন আটক কেন্দ্রের নাম আয়নাঘর। ধারণা করা হয়, এখানে কমপক্ষে ১৬টি কক্ষ রয়েছে যেখানে একসাথে ৩০ জন বন্দী রাখার সক্ষমতা রয়েছে। আয়নাঘরটি বাংলাদেশের ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত বলে ধারণা করা হয়। 

সুইডেন ভিত্তিক স্বাধীন নিউজ পোর্টাল নেত্র নিউজের, একটি অনুসন্ধানী হুইসেলব্লোয়ার প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে অভিযোগ করা হয় যে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আয়নাঘরে (আয়নাঘর) বলপূর্বক গুমের শিকারদের আটক ও নির্যাতন করছে।

সুইডেন ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল গোপন কারাগারের সম্ভাব্য অবস্থানও প্রকাশ করেছে, যেখানে বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের বাংলাদেশে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। নেত্র নিউজের বিশদ প্রতিবেদনটি বলপূর্বক গুমের শিকার দুই ব্যক্তি হাসিনুর রহমান এবং শেখ মোহাম্মদ সেলিম-এর অন-দ্য রেকর্ড অ্যাকাউন্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যারা বলেছেন যে তাদের ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কারাগারের ভিতরে রাখা হয়েছিল।

২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে কোন ব্যক্তির নিখোঁজ হন ৪০২ জন মানুষ। এ তথ্যটি প্রকাশ করে ঢাকা ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। ২০১৪ থেকে জুলাই ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৪৪ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৪০ জন ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, ৬৬ জনকে সরকারি হেফাজতে গ্রেপ্তার অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে ২০৩ জন এখনও গুম রয়েছেন। যারা দীর্ঘদিন গুম থাকার পর ফিরে আসেন, তারা গুমের ব্যাপারে মৌন অবলম্বন করেন। ধারণা করা হয় এসব মানুষদের গুম করে রাখা হয় আয়নাঘরে।

আয়নাঘরে যারা বন্দী থেকেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ মোবাশার হাসান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়।

এছাড়াও আয়নাঘর থেকে সম্প্রতি ছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশী ব্যারিস্টার এবং জামায়াতে ইসলামী নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমদ বিন কাসেম, সাবেক সামরিক জেনারেল এবং জামায়াতে ইসলামী নেতা গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আজমি, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সংগঠন ইউপিডিএফের মুখপাত্র মাইকেল চাকমা।

বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ এইসব ঘটনার জন্য জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার রক্ষাকারী সংস্থা, যেমন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারকে নিন্দা প্রস্তাব জানায়।

এসময় গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যরা মায়ের ডাক নামে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করেন। এখানে যাদের পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে সরকারি সংস্থা কর্তৃক বলপূর্বক গুমের শিকার হয়েছে সে ঘটনাসমূহকে সামনে আনার জন্য এ সংগঠনের সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশ বেসরকারি একটি সংবাদ মাধ্যম থেকে ধারণা করছে, যে দেশের বিভিন্ন স্থানে এরকম আরও বেশ কিছু নির্যাতন ও আটক স্থান থাকতে পারে।