কতিপয় উচ্চাভিলাসী-অপেশাদার কর্মকর্তাদের কারণে পুলিশ সংকটে: নতুন আইজিপি
পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেছেন সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার কেন্দ্রিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘর্ষের জেরে সংগঠিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করতে পুলিশ আইনিভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেলে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টিগ্রিটি হল রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
পুলিশের বর্তমান সংকটের কারণ হিসেবে নতুন আইজিপি বলেন, আমাদের কতিপয় উচ্চাভিলাসী ও অপেশাদার কর্মকর্তাদের কারণে জোরপূর্বক কর্মসূচি গ্রহণের কারণে পুলিশ সদস্যরা আহত ও নিহত হয়েছে। এর ফলে পুরো বাহিনী সংকটে পড়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এতগুলো মানুষের রক্ত হাতে মাখা পুলিশ নিজেদের বিরুদ্ধে কী উপায়ে তদন্ত কাজ পরিচালনা করবে?- দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে কোনো জবাব দেননি আইজিপি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে সব পুলিশ সদস্যকে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যেই পুলিশ সদস্যদের কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ নতুন আইজপির
তিনি সংবাদ সম্মেলনে কোনো প্রশ্ন নিতে চাননি। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে কিছু কথা বলেছেন। থানাগুলোর পুনর্নির্মাণ ও বাহিনী শৃঙ্খলা ফেরানো নিয়ে তিনি বলেন, আমরা বাহিনীর সদস্যদের আগামীকাল বিকালের মধ্যে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দিয়েছি। সব অফিসার ও সদস্যদের নিয়ে এ বিষয়গুলো দেখবেন বলেও জানান তিনি।
তিনি সদর দপ্তরের নির্দেশনা অফিসার ও ফোর্সদের কাছে পৌঁছাতে গণমাধ্যমের সাহায্য কামনা করে বলেন, বিরাজমান বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি এবং বিবর্তনমূলক কার্যক্রমের ফলে ছাত্র-জনতা একটি অভূতপূর্ব একটি নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। এ আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন—তাদের প্রতি শোক জ্ঞাপন করছি।
দেশের যেকোনো প্রয়োজনে পুলিশ বাহিনী পেশাদারিত্বের সাথে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পরেনি। সেজন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। এ আন্দোলনে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের তদন্তপূর্বক বিচার করা হবে।
আরও পড়ুন: পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক ময়নুল ইসলাম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। এর কারণে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অনেকেই স্ব স্ব ইউনিটে নেই। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা নতুন করে সব শুরু করতে চাই। তাই সবাইকে আগামী ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে স্ব স্ব কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ যেন আরও বেশি জনবান্ধব হতে পারে সেজন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। নাগরিকদের জীবনমানের উন্নয়নে আমরা কাজ করবো। সেজন্য আমাদের সামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সমন্বয়ে এক সাথে কাজ করবো।
এর আগে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে নতুন আইজিপি হিসেবে মো. ময়নুল ইসলামকে নিয়োগের তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
আরও পড়ুন: পুলিশ ক্ষমাপ্রার্থী, সব হত্যাকাণ্ডের তদন্তপূর্বক বিচার হবে: নতুন আইজিপি
তার আগে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সঙ্গে সরকারের সম্পাদিত চুক্তিপত্রের অনুচ্ছেদ-৭ অনুযায়ী পুলিশ মহাপরিদর্শক পদে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হলো। এ প্রজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব ভাস্কর দেবনাথের সই রয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে তা দমনে দেশত্যাগী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখতে শিক্ষার্থীদের দমনে জোর প্রয়োগ করে পুলিশ সদস্যরা। মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং শিক্ষার্থীদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যার কারণে আন্দোলনকারীসহ সাধারণ মানুষের রোষে পড়ে কর্মস্থল থেকে পালাতে বাধ্য হন পুলিশের সদস্যরা। ফলে সংকটে পড়ে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা বাহিনীটি।