০৫ আগস্ট ২০২৪, ১০:২৬

সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে এক সাংবাদিক নিহত, আহত অন্তত ২৫

  © সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন রবিবারে সিরাজগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। একইদিনে সারাদেশে আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ সাংবাদিক।

সিরাজগঞ্জে নিহত সাংবাদিকের নাম প্রদীপ কুমার ভৌমিক। তিনি দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি ছিলেন। এ নিয়ে চলমান কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হলেন।

রবিবার দুপুরে বিক্ষোভকারীরা রায়গঞ্জ প্রেসক্লাবে ভাঙচুর করে। সেই সময় প্রদীপকে মারধর করা হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) প্রাঙ্গণে ডেইলি স্টারের ফটো সাংবাদিক এমরান হোসেনের ওপর হামলা হয়।

সেসময় অজ্ঞাত অগ্নিসংযোগকারীরা বিএসএমএমইউ চত্বরে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর কিছুক্ষণ আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভকারীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাসপাতালের দিকে ধাওয়া দেয়।

এমরান জানান, হামলাকারীরা লাঠি দিয়ে তার পিঠে ও মাথায় আঘাত করে। ভেস্ট ও হেলমেট থাকায় তিনি রক্ষা পান। তবে লাঠির বাড়িতে হাতে-পায়ে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছেন তিনি। হামলাকারীরা তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ ছিঁড়ে ফেলে, ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে রবিবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় হামলার শিকার হন ডেইলি স্টারের নিজস্ব প্রতিবেদক এফএম মিজানুর রহমান। সেই সময় ওই এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ চলছিল। পরে আন্দোলনরত দুই শিক্ষার্থী তাকে উদ্ধার করে।

ঠাকুরগাঁওয়ে প্রথম আলো প্রতিনিধি মজিবুর রহমান হামলার শিকার হন। নগরীর জজকোর্ট এলাকায় ছুরি, রড ও লাঠির আঘাতে তিনি আহত হন।

পাঁচ জেলায় একাত্তর টিভির প্রতিবেদক ও ক্যামেরা পারসন হামলার শিকার হন। এর মধ্যে ঢাকায় রামপুরা ব্রিজের কাছে হাতিরঝিল এলাকায় একাত্তর টিভির একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সেই সময় ওই টিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাবিব রহমান আহত হন।

হামলার শিকার একাত্তর টিভির অন্য প্রতিনিধিরা হলেন—চাঁদপুরের আল আমিন ভূঁইয়া, পটুয়াখালীর আহসানুল কবির, সিলেটের হোসেন আহমেদ ও মুন্সিগঞ্জের জসিমউদ্দিন দেওয়ান।

রাজধানীর ধানমন্ডি-২৭ এলাকায় হামলায় বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের দুই সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম ও নাইমুল ইসলাম মিরাজ আহত হয়েছেন। জাহিদুল জানান, দুপুর ১২টার দিকে রাপা প্লাজার সামনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন তারা। জাহিদের মাথায় পাঁচটি সেলাই করতে হয়েছে।

একই এলাকায় সকাল সাড়ে ১১টার দিকে লাঞ্ছিত হন ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদক নওয়াজ ফারহিন অন্তরা।

রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শাহবাগ এলাকায় হামলার শিকার হন চ্যানেল ২৪ এর প্রতিবেদক শামীমা সুলতানা। শামীমাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের দুই সাংবাদিক মাহমুদ হাসান ও মাসুম বিল্লাহ।

শামীমা বলেন, ভেস্ট ও হেলমেট পরা না থাকলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হতে পারত।

জিগাতলা এলাকায় দৈনিক যায় যায় দিনের দুই সাংবাদিক নাহিদ হাসান ও আমিরুল ইসলাম হামলার শিকার হয়েছেন।

তারা জানান, ওই সময় হামলাকারীরা তাদের মোবাইল ফোন ও মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।

উত্তরায় সময় টিভির রিপোর্টার মোরসালিন জোনায়েদ ও ক্যামেরাপারসন মো. মুরাদ হামলার শিকার হয়েছেন।

হামলায় মানিকগঞ্জে ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির জেলা প্রতিনিধি আরএস মঞ্জুর রহমান, এটিএন বাংলার স্টাফ রিপোর্টার শহীদুল ইসলাম ও স্থানীয় আমার নিউজের স্টাফ রিপোর্টার দেওয়ান সাদমান আহত হয়েছেন।

এছাড়া, পাবনা, কিশোরগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।