উপজেলা চেয়ারম্যানের গুলিতে ৪ আন্দোলনকারী নিহত, শতাধিক গুলিবিদ্ধ
লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রোববার আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সাতজন ক্ষমতাসীন দলের এবং চারজন সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারী। আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপুর চালানো গুলিতে চার আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন আরও ২০ জন আন্দোলনকারী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন জানান, তারা শান্তিপূর্ণভাবে শহরের ঝুমুর এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের লোকজন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের ওপর হামলা করেছে। তারা বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করেছে। গুলিতে চারজন প্রাণ হারান এবং আরও ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালেও নেওয়া যায়নি। ঢাকা ও নোয়াখালীতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আন্দোলনকারীরা জানান, সকালে গুলির পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার তমিজ মার্কেটের পাশে নিজ বাসা থেকে তাহেরপুত্র টিপু ও তাঁর সহযোগীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে আবারও গুলি করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেলে টিপু ও তার অনুসারীরা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে অনবরত গুলি করতে থাকে। এ সময় ওই এলাকায় কোনো পুলিশ দেখা যায়নি।
টিপুর গুলিতে এবং দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহতরা হলেন– আন্দোলনকারী আফনান পাটওয়ারী, কাউছার, সাব্বির, মিরাজ এবং আওয়ামী লীগ নেতা সদর উপজেলার বাংগাখাঁ ইউপির সদস্য মো. শাহজাহান ও একই উপজেলার টুমচর ইউপি সদস্য হারুনুর রশিদ। বাকিদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে শহরের মাদাম ব্রিজ এলাকায় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সালাহ উদ্দিন টিপু আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি করেন। পরে আন্দোলনকারীরা দুপুর ২টার দিকে তাঁর শহরের তমিজ মার্কেট এলাকার বাসা ঘেরাও করলে ফের ছাদ থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করেন তিনি। এতে শতাধিক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনকারীরা টিপুর বাসায় পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন।
জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা টিপুর বাড়ির আগুন নেভাতে এগিয়ে এলেও তাদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কাছেই সদর থানা থাকলেও পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর পৌরশহরে শত শত ব্যবসায়ীকে দাঁড়িয়ে আগুন জ্বলতে থাকার দৃশ্য দেখতে দেখা যায়।
এদিন দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদের সামনে ও মাদাম ব্রিজ এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। শহরের উত্তর তেমুহনীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং মাদাম ব্রিজ ও ঝুমুর এলাকায় আন্দোলনকারীরা লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন। তারা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেন। এ সময় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছেন আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পিছু হটে শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় এসে অবস্থান নেন। আর শিক্ষার্থীরা ছিলেন মাদাম ব্রিজ থেকে ঝুমুর এলাকা পর্যন্ত।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার অরূপ পাল বলেন, অর্ধশতাধিক আহত রোগীকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনকে মৃত পেয়েছেন। তারা গুলিবিদ্ধ। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা ছাত্রলীগের নেতা শাহনেওয়াজ হীরা বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে ঝুমুর অতিক্রম করছিলাম। এ সময় জামায়াত-শিবির ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। গুলিও করেছে। চাপাতি দিয়ে আমাদের অনেককে কুপিয়েছে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল রানা বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন টিপুর বাসার সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় গোলাগুলি হয় ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনা তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে জানতে সদর মডেল থানার ওসি ইয়াছিন ফারুক মজুমদারকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।