বিস্ফোরক মামলায় কারাগারে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ শংকর দাস
কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা নাশকতা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন শংকর কুমার দাস (৫৫) নামের এক ব্যক্তি। তার বাবার নাম হারান চন্দ্র দাস। পরিবারের দাবি তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন।
শংকরের পরিবার জানায়, সকালে বাসা থেকে হাঁটতে বেরিয়ে নিখোঁজ হন তিনি। এরপর তাঁর সন্ধানে জিডি, নিখোঁজ সংবাদ প্রকাশ এবং থানায় যোগাযোগ করেন তারা। কিন্তু সন্ধান মেলেনি। ঘটনার আট দিন পর জেলখানায় খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে সেই ব্যক্তির সন্ধান।
নারায়ণগঞ্জ শহরের কিল্লারপুল শীতলক্ষ্যা হাউজিংয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন শংকর কুমার দাস। আগে একটি রপ্তানিমুখী গার্মেন্টসে কাজ করলেও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে বর্তমানে বেকার জীবনযাপন করছেন। নারায়ণগঞ্জ সদর থানার দায়ের করা নাশকতা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ২৪ জুলাই ভোরে নিজ বাসা থেকে হাঁটার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন শংকর কুমার দাস। তার পরণে ছিল কালো রঙের টিশার্ট ও বাদামী রঙের লুঙ্গি। নিখোঁজ শংকরের সন্ধানে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেন পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরা। শেষ পর্যন্ত সন্ধান না পেয়ে পরদিন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় শংকরের সন্ধানে একটি সাধারণ ডায়রি করতে চান।
কিন্তু সদর মডেল থানা পুলিশ তাদেরকে কোটাবিরোধী আন্দোলনের ইস্যু দেখিয়ে কয়েকদিন পরে আসতে বলেন। গত ২৭ জুলাই নিখোঁজের স্ত্রী অর্চনা রানী দাস বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন। ওই জিডি দায়েরের সময়ও নিখোঁজের স্বজনরা পুলিশের কাছে শংকরকে কোনো মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলেও তারা কোনো সদুত্তর দেননি।
এরপর নিখোঁজের স্বজনরা ফতুল্লা থানা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সঙ্গেও এ বিষয়ে যোগাযোগ করেন। কিন্তু নিখোঁজ শংকরের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে স্বজনরা স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন শংকরের মতো দেখতে একজনকে কিছুদিন আগে পুলিশ আটক করেছিল। গত ৩১ জুলাই স্বজনরা নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে খোঁজ করলে সেখানে মেলে মানসিক ভারসাম্যহীন শংকর কুমার দাসের সন্ধান।
নিখোঁজ শংকর কুমার দাসের ভাগ্নে শিপলু দাস বলেন, আমার মামা দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা সদর থানাসহ আশপাশের থানাগুলোতেও খোঁজ নিয়ে তার কোনো সন্ধান পাচ্ছিলাম না। এ বিষয়ে সদর মডেল থানায় নিখোঁজের জিডি দায়েরের পাশাপাশি তার ছবি দিয়ে পোস্টার তৈরি করে শহরের বিভিন্ন স্থানে লাগাই।
তিনি আরও বলেন, একটি জাতীয় দৈনিক ও একটি স্থানীয় দৈনিকেও নিখোঁজের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। কিন্তু এরপরও কোনো খোঁজ মিলছিল না। পোস্টার দেখে স্থানীয় এক ব্যক্তি পরে আমাদেরকে জানান আমার মামার মতো দেখতে একজনকে পুলিশকে আটক করতে তিনি দেখেছেন। সেইসঙ্গে গত ৩১ জুলাই পরিবারের সদস্যরা নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে গিয়ে জানতে পারেন তিনি নারায়ণগঞ্জে একটি বিস্ফোরক মামলায় কারাবন্দি রয়েছেন।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট বিদ্যুৎ কুমার সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, শংকর কুমার দাসকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি বিস্ফোরকের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিনি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাৎ হোসেন বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারবো।