এবার ‘লাল’ হলো সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিমের প্রোফাইল
নিজেদের ব্যক্তিগত সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রোফাইলে ‘লাল রঙের’ ছবি দিচ্ছেন কোটা আন্দোলনে সমর্থন দেওয়া শিক্ষার্থী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। হত্যা ও নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের প্রতি সহমর্মিতা ও সরকারের প্রতি প্রতিবাদস্বরূপ তারা এ কর্মসূচি পালন করছেন। এবার শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজের ব্যক্তিগত প্রোফাইলের ছবি পরিবর্তন করেছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া। কাভার ফটো বদল করেও তিনি দিয়েছেন লাল রঙের ছবি।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাতে তিনি তার প্রোফাইল পিকচার ও কাভার ফটো পরিবর্তন করেন। হাজারো মানুষ শেয়ার ও মন্তব্য করেছেন। বেশিরভাগ ব্যবহারকারী তার এমন পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।
শুধু জেনারেল ইকবাল করিম নয়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের প্রোফাইল লাল রঙের ফ্রেমে রাঙিয়েছেন আরও অনেকে। এসব ব্যক্তির মধ্যে শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন। অন্যদিকে সরকার-সমর্থকদের অনেকে ফেসবুক প্রোফাইলে কালো রঙের ফ্রেম জুড়েছেন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে মঙ্গলবার সারা দেশে শোক পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর রাতে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির পক্ষে রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে আজ মুখ ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলার কর্মসূচি ঘোষণা করেন কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক।
এই কর্মসূচি ঘোষণার পর গতকাল রাত থেকেই ফেসবুকের প্রোফাইলে লাল রঙের ফ্রেম সাঁটাতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা তাদের ফেসবুক প্রোফাইলে লাল ফ্রেম সাঁটিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, কামরুল হাসান, সামিনা লুৎফা, রুশাদ ফরিদী, কাজলী সেহরীন ইসলাম, সাইফুল আলম চৌধুরী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জামিল খান প্রমুখের ফেসবুক প্রোফাইলে লাল রঙের ফ্রেম দেখা গেছে।
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া ইকবাল করিম ভূঁইয়াও এ দলে যোগ দেন। কর্মজীবনে ইকবাল করিম ১৯৭৬ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ২০১০ সালের মে মাসে তিনি পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হন। ২০১২ সালের ২৫ জুন তাঁকে সেনাপ্রধান করা হয়। ২০১৫ সালের ২৫ জুন অবসরে যান। ১৬তম সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি জেনারেল আবদুল মুবীনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। ইকবাল ভূঁইয়াকে বাংলাদেশেী স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে সবচেয়ে সফল সেনাপ্রধানদের একজন হিসেবে মনে করা হয়।
১৯৫৭ সালের ২ জুন কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন ইকবাল করিম। কুমিল্লা জিলা স্কুল এবং ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতায় দেশে-বিদেশে সেনাবাহিনীর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য কাজ করেছেন তিনি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান যাতে আরো মর্যাদাপূর্ণ হয়, সে জন্য গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন পদক্ষেপ। তাঁর দায়িত্ব পালনকালে সেনা সদস্যদের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, রেশন, আবাসন, মেসে খাবারের মানোন্নয়ন এবং সিএমএইচে আরো সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে।
ইকবাল করিম ভূঁইয়া দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি দেশ-বিদেশে বেশ কটি প্রফেশনাল কোর্সে অংশ নেন। তিনি মালয়েশিয়ায় কম্পানি কমান্ডার কোর্স, যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড ডিফেন্স ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যাল স্টাডিজে 'কোর্স অন পিস কিপিং ফর ডিসিশন মেকার্স' সম্পন্ন করেন। ইকবাল করিম ভূঁইয়া মিরপুরে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ড অ্যান্ড জেনারেল স্টাফ কলেজের গ্র্যাজুয়েট।
এছাড়া তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জেএফকে স্কুল অব গভর্নমেন্টে অনুষ্ঠিত ইনিশিয়েটিভ ফর কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং সিয়েরালিয়নের ফ্রিটাউনে লজিস্টিক সাপোর্ট ইস্যুজ-বিষয়ক কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন।
মেসে থাকা সৈনিক ও সিএমএইচে ভর্তি রোগীদের খাবারের মান উন্নয়নে কাজ করেন তিনি। সামরিক হাসপাতালগুলোয় প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ, বহির্বিভাগ, ওয়ার্ড ও শয্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা করেন তিনি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনবল সংকট নিরসন, সব স্তরের সেনাসদস্যের পারিবারিক পেনশনের হার বাড়ানো- এসব ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা অনেক। এছাড়া সেনাবাহিনীর এভিয়েশন ইউনিটের বৈমানিকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, কমান্ডো-প্যারাকমান্ডো সদস্যদের উড্ডয়ন ঝুঁকি বিমার আওতায় আনা, নতুন বেতন-স্কেল প্রণয়নে তার ভূমিকার প্রশংসা রয়েছে অনেক।