প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে: ওবায়দুল কাদের
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য বিবৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে একটা কথা বলেছিলেন, ‘কোটা সুবিধা মুক্তিযুদ্ধের নাতিপুতিরা পাবে, না তো রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?’ এই কথাটাকে কীভাবে বিকৃত করা হচ্ছে। টকশোর উপস্থাপক পর্যন্ত এই কথাটিকে বিকৃত করে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে দেশের জনগণের মাঝে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াস তারা করেছে।’’
প্রধানমন্ত্রী গত রবিবার (১৪ জুলাই) গণভবনে চীন সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। প্রশ্নোত্তরে কোটা সংস্কার নিয়ে চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গও উঠে আসে।
ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বা দেশবাসীর পক্ষের না ভেবে রাজাকার ভাবল কী করে? তাদেরকে তো রাজাকার বলেননি। প্রধানমন্ত্রী তো কোটা আন্দোলনের কাউকে উদ্দেশ করে রাজাকার শব্দটি ব্যবহার করেননি। তাহলে এটা কেন হলো? এই আন্দোলনের একটা অংশ রাজাকারের পক্ষ অবলম্বন করছে, এটা দিবালোকের মত পরিষ্কার। এর পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। এর পেছনে আছে তারেক রহমান। এটা হচ্ছে কোটাবিরোধিতার নামে সরকারবিরোধী আন্দোলন।’
কাদের বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীকেই ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করায় ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যায়। বিএনপি-জামায়াতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাতায় তাদের কে কে স্পটে থাকবেন, নাশকতা চালাবে, গুপ্ত হত্যার পরিকল্পনা করছে।’ এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধের অপশক্তির আস্ফালনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগ শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতির বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল বলেও দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের ছাত্র সংগঠনের ক্যাডাররা আন্দোলনকারী পরিচয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করছে। হলে হলে গিয়ে সাধারণ ছাত্রদের জোরপূর্বক আন্দোলন করার জন্য ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মধ্যরাতে মেয়েদের আবাসিক হলের দরজা ভেঙে সহিংসতা সৃষ্টি করেছে।’
আন্দোলনকারীরা বিনা উসকানিতে ছাত্রলীগসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে বলে দাবি করেন কাদের। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতার ছবি ব্যবহার করে ভুয়া আইডি ও পেজ থেকে অপপ্রচার করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করার চেষ্টা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের ছাত্রসংগঠন সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।’
সোমবার (১৫ জুলাই) আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্পর্কে যা বলেছেন, তা নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। তারা অন্য দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে আয়নায় নিজেদের চেহারাট দেখে নিতে পারে।’
আন্দোলনে নিহত হয়েছে এমন তথ্য আমেরিকার কাছে কীভাবে যায়, এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘শোনেন, এখন ম্যাথিউ মিলারকে জিজ্ঞেস করেন, তারা কীভাবে তথ্য পেলো। এ প্রশ্নটা তাদের করেন। এসব আজগুবি তথ্য তারা কোথা থেকে পেলো?’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর প্রমুখ।