‘আপনার বাবাকে দুর্নীতিবিরোধী টিকা দিন’
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসসহ (বিসিএস) ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন সবচেয়ে বেশি সমালোচিত। বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। বাবা আবেদ আলীর কারণে তার ছেলে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম আলোচনায় আসেন। সিয়ামকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বাবা-ছেলের দুর্নীতি এমন সব কাণ্ড সামনে আসার পর মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি দিয়ে পোস্ট শেয়ার করে। ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে আওয়াজ উঠুক ঘর থেকে’ ক্যাপশন দিয়ে ছবিতে লিখা আছে ‘আপনার বাবাকে দুর্নীতিবিরোধী টিকা দিন’।
বাবার দুর্নীতির জন্য বর্তমানে সিয়ামকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর ফলে সংগঠনের নীতি ও নৈতিকতা পরিপন্থি কার্যকলাপের জড়িত থাকায় তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ। সোমবার (৮ জুলাই) রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শামীমের সই করা যৌথ বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, সংগঠনের নীতি ও নৈতিকতা পরিপন্থি কার্যকলাপের সঙ্গে লিপ্ত থাকায় সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামকে (ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর) ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ হতে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
রোববার (৭ জুলাই) একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুসন্ধানে উঠে আসে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ঘটে চলা দুর্নীতির বিষয়টি। এরপর সাঁড়াশি অভিযানে নামে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় গণমাধ্যমসহ সামাজিকমাধ্যমে সব থেকে বেশি সমালোচিত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানের সাবেক ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক প্রোফাইলের বিভিন্ন পোস্টে সৈয়দ আবেদ আলী রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ড, দান খয়রাত আর পরহেজগারির নানা খবর দেখা যায়। গত ১২ জুন তিনি ফেসবুকের এক পোষ্টে লিখেন, ‘আমার জীবনে কোনোদিন অসদুপায় অবলম্বন করিনি। গায়ে খেটে ভাগ্য পরিবর্তন করেছি’। আবেদ আলীকে জিজ্ঞেস করা হয়, গাড়িচালক হয়ে আপনি এত সম্পদের মালিক হলেন কীভাবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘গাড়িচালক ছিলাম ১৫ বছর আগে, এখন তো ব্যবসায়ী।’
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বাসিন্দা আবেদ আলী একজন ড্রাইভার হলেও তার কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য সামনে এসেছে। প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য সামনে আসার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিপুল সম্পদের তথ্য তুলে ধরছেন নেটিজেনরা। ছেলে ছাত্রলীগ নেতা, পড়েছেন বিদেশে, এরপর দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকার ভেতর তার দুটি বহুতল ভবন, মাদারীপুরে আলিশান বাড়ি রয়েছে এমন তথ্যও সামনে এসেছে।
এদিকে কিছুদিন আগে কুরবানির জন্য ১২ লাখ টাকার ছাগল কেনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আলোচিত দুটি নাম- মুশফিকুর রহমান ইফাত ও মতিউর রহমান। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (শুল্ক ও আবগারি) ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ‘প্রশ্নফাঁসে যা কামিয়েছি, সব আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছি’
আলোচনা-সমালোচনার সূত্র ধরেই মতিউরের বিপুল সম্পদের বিষয়টি সামনে আসে। এরপর থেকে মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, পার্ক, বিলাসবহুল বাংলোবাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে বিপুল সম্পত্তি থাকার তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে।
এছাড়া দেশের জনপ্রিয় কনটেন্ট নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম ইফতেখার রাফসানের বাবাও রয়েছেন দুর্নীতির তালিকায়। ‘রাফসান দ্য ছোট ভাই’ নামে পরিচিত রাফসান সম্প্রতি মা-বাবাকে একটি অডি গাড়ি উপহার দেন। যার বাজারমূল্য ২ কোটি টাকা। এর পরেই আলোচনায় আসে তার মা-বাবার আড়াই কোটি টাকার ব্যাংকঋণের একটি তথ্য। সেটি এখন বেড়ে সোয়া তিন কোটি। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।