০৯ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪৩

‘প্রশ্নফাঁসে যা কামিয়েছি, সব আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছি’

সৈয়দ আবেদ আলী   © সংগৃহীত

বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরমধ্যে রয়েছে তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম, পিএসসির দুই উপ-পরিচালক, একজন সহকারী পরিচালক, দুই অফিস সহায়কও। গণমাধ্যমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আবেদ আলীর কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়, প্রশ্নফাঁসে কত টাকা ইনকাম করেছেন? জবাবে আবেদ আলী বলেন, ‌‌‘প্রশ্নফাঁসে যত টাকা কামাই করেছি, সব খরচ করেছি আল্লাহর রাস্তায়।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক প্রোফাইলের বিভিন্ন পোস্টে সৈয়দ আবেদ আলী রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ড, দান খয়রাত আর পরহেজগারির নানা খবর দেখা যায়। গত ১২ জুন তিনি ফেসবুকের এক পোষ্টে লিখেন, ‘আমার জীবনে কোনোদিন অসদুপায় অবলম্বন করিনি। গায়ে খেটে ভাগ্য পরিবর্তন করেছি’।

আবেদ আলীকে জিজ্ঞেস করা হয়, গাড়িচালক হয়ে আপনি এত সম্পদের মালিক হলেন কীভাবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘গাড়িচালক ছিলাম ১৫ বছর আগে, এখন তো ব্যবসায়ী।’

রোববার (৭ জুলাই) রাতে বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর ফেসবুকে সৈয়দ আবেদ আলীর পোস্টগুলো ভাইরাল হতে থাকে। সাঁড়াশি অভিযানে নামে সিআইডি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে সোমবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বাসিন্দা আবেদ আলী একজন ড্রাইভার হলেও তার কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য সামনে এসেছে। প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য সামনে আসার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিপুল সম্পদের তথ্য তুলে ধরছেন নেটিজেনরা। ছেলে ছাত্রলীগ নেতা, পড়েছেন বিদেশে, এরপর দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকার ভেতর তার দুটি বহুতল ভবন, মাদারীপুরে আলিশান বাড়ি রয়েছে এমন তথ্যও সামনে এসেছে।

আরও পড়ুন: ভালো মানুষ সেজে উপজেলা চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন আবেদ আলী

রোববার (৭ জুলাই) রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১২ বছরে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের পেছনে জড়িত পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলেন– উপপরিচালক মো. আবু জাফর, উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবির, সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান। পিএসসির কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই প্রশ্নফাঁস করে অর্থ লোপাটে মেতে উঠত সংঘবদ্ধ চক্রটি।

এদিকে, বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। এর ফলে সংগঠনের নীতি ও নৈতিকতা পরিপন্থি কার্যকলাপের জড়িত থাকায় তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ। সোমবার (৮ জুলাই) রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শামীমের সই করা যৌথ বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। 

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, সংগঠনের নীতি ও নৈতিকতা পরিপন্থি কার্যকলাপের সঙ্গে লিপ্ত থাকায় সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামকে (ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর) ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ হতে অব্যাহতি দেওয়া হলো ।