০৮ জুলাই ২০২৪, ২২:০১

দুর্নীতিমুক্ত উপজেলা গড়তে চান প্রশ্নফাঁসে গ্রেপ্তার আবেদ আলীও!

আবেদ আলীর নির্বাচনী পোস্টার  © সংগৃহীত

বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল রবিবার (৭ জুলাই) বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাঁড়াশি অভিযানে নামে সিআইডি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। সংবাদ প্রকাশের পর যাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন ভাইরাল।

প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য সামনে আসার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বিপুল সম্পদের তথ্য তুলে ধরছেন নেটিজেনরা। ছেলে ছাত্রলীগ নেতা, পড়েছেন বিদেশে, এরপর দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকার ভেতর তার দুটি বহুতল ভবন, মাদারীপুরে আলিশান বাড়ি রয়েছে এমন তথ্যও সামনে আসছে।

সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের বাড়ি মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায়। পরহেজগার, নামাজি, এলাকায় সজ্জন ও দানশীল হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আবেদ আলীর একজন ড্রাইভার হলেও তার কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য সামনে এসেছে। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, আবেদ আলীর পরিবার অসচ্ছল হওয়ায় মাত্র আট বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। কখনও কুলির কাজ আবার কখনও ছোট ছোট কর্ম করতেন। দিন কেটেছে নিদারুণ কষ্টে। এরপর শেখেন গাড়ি চালানো। চাকরি নেন পিএসসিতে। দিনে দিনে জড়িয়ে পড়েন বিসিএসসহ পিএসসির প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে। আর ফিরে তাকাতে হয়নি পেছনে। অর্জন করেছেন বিপুল সম্পদ। অর্থকড়ির সঙ্গে সমানতালে এসেছে ক্ষমতাও। হতে চান মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন।

আবেদ আলী মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের সৈয়দ আব্দুর রহমান মীরের সন্তান। চার ভাইবোনের মধ্যে আবেদ আলী মেজো। 

রহস্যঘেরা এই গাড়িচালক গ্রামের বাড়ি এসে নেমে পড়েন ডাসার উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায়। কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে চালিয়েছেন গণসংযোগও। সঙ্গে থাকছেন তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। বাবা-ছেলে এলাকায় দান ও সহায়তা করেছেন দুই হাত ভরে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, আবেদ আলী মীর বংশের ছেলে। টাকা পয়সা হওয়ার পর মীর বাদ দিয়ে সৈয়দ বংশের পরিচয় দিতেন। পরে সবাই সৈয়দ আবেদ আলী বলে ডাকতে শুরু করেন। তবে তার উত্থানের গল্প সিনেমাকেও হার মানাবে।

সম্প্রতি বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এক প্রতিবেদনে উঠে আসে আবেদ আলীর ভয়ংকর তথ্য। প্রায় একযুগ আগে থেকে পিএসসির প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত। তিনি পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
 
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, তিনি নিজ নামে গ্রামে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল বাড়ি ও মসজিদ। অবৈধ টাকার মালিক হয়ে পরিবার নিয়ে রাজকীয় জীবনযাপন করছেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ফ্ল্যাটসহ একাধিক ভবন। নিজ বাড়ির পাশেই সরকারি জমি দখল করে তৈরি করেছেন গরুর খামার। গৌরনদীর খাঞ্জাপুরেও রয়েছে তার একটি বাড়ি। সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় তৈরি করেছেন সান মেরিন নামে বিলাসবহুল হোটেল। এ ছাড়া পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন একাধিক দামি গাড়ি। নামে-বেনামে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার জমি ও সম্পদ।

একজন গাড়িচালক এত সম্পদের মালিক হওয়ায় তার সম্পর্কে জানার কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

আবেদ আলী পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক হলেও এলাকার মানুষ জানতেন না বিষয়টি। গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনকে এক কেজি করে মাংস দিয়েছেন। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। আবেদ আলীর ছেলে সিয়াম একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। সবই দামি। পড়েছেন ভারতের শিলংয়ে। তারপর দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেছেন।

তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের তথ্য। পিএসসির ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্নফাঁসে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অভিযুক্ত কর্মচারীদের একজন পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী।