কোটা বাতিলের আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন ফারুকী, যা লিখেছিলেন
সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটা বাতিল এবং ২০১৮ সালের সরকারি পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আশপাশের ১০টি মোড় অবরোধ করেছেন আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তাঁর পোস্টটি আর ফেসবুকে দেখা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, বিতর্ক এড়াতেই পোস্টটি ডিলিট করেছেন তিনি। পোস্টে যা লিখেছিলেন ফারুকী।
ফারুকী লিখেছিলেন, ‘ঢালাও কোটার নামে মেধাহীন রাষ্ট্রব্যবস্থাকে উৎসাহ দেয়া বন্ধ হোক। সমাজের অনগ্রসরদের জন্য ১০ ভাগ কোটা থাকতে পারে। তার জন্য ৫৬ ভাগ?’
আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ফারুকী আরও লেখেন, ‘এই আন্দোলনে যারা আছো, তাদের সবার জন্য লাল সালাম। নিজের সুস্থতার জন্য অনলাইনে খুব বেশি থাকি না। সকল উত্তেজনা থেকে দূরে থাকার চেষ্টায় আছি। কিন্তু এই কথাগুলা না বললে ইতিহাসের কাছে অপরাধী থেকে যাবো। আমার মেয়েরা যখন বড় হবে, বলবে, বাবা যখন এইরকম একটা ব্যবস্থা করা হয়, তখন তোমরা কী করছিলে?’
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এই কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় ছাত্র আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর ফলে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল হয়ে যায়।
তবে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের শুনানি শেষে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। ফলে কোটা বহাল হয়ে যায়।
এতে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা। কোটা বাতিলের দাবিতে আবার রাস্তায় নামেন তাঁরা। ঈদুল আজহার আগে কয়েক দিন বিক্ষোভের পর দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ১ জুলাই থেকে জোর আন্দোলন শুরু করেছেন তাঁরা।
কর্মসূচির ঘোষণা
কোটা বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ঘোষণা দিয়ে বলেন, এতদিন আমরা চার দফা নিয়ে আন্দোলন করেছি আজ থেকে আমরা এক দফা নিয়ে আন্দোলন করবো আর সেটি হলো সকল গ্রেডে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য যে কোটা রয়েছে সেটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাশ করতে হবে।
রবিবার (৭ জুলাই) রাত ৮ টায় শাহবাগ মোড় থেকে তিনি আন্দোলনকারীদের উদ্দ্যেশ্যে এই ঘোষণা দেন।
পরবর্তীতে আগামীদিনের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান। তিনি বলেন, আমাদের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের যে কর্মসূচি সেটি অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘোষণা করা হলো। আমাদের যে ব্লকেড কর্মসূচি সেটি আগামীকাল বহাল থাকবে। আজ আমরা কারওয়ান বাজার পর্যন্ত গিয়েছি কাল আমরা শাহবাগ পৌঁছে যাবো।
তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাদের কোনো দাবি যৌক্তিক মনে না হলে এদেশে শতভাগ কোটা চালু করা করেন। কোটাধারীদের প্রশাসনে আমরা যেতে চাইনা। এই প্রশাসন কোটাধারীদের প্রশাসন। হয় কোটা বৈষম্য নিরসন হবে নয়তো দেশকে কোটাধারীদের দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হোক। যে দেশে মেধাবীদের মূল্যায়ন সে দেশে আমরা থাকতে চাইনা। আমাদেরকে আদালত দেখিয়ে লাভ নাই আমরা আপনাদেরকে সংবিধান দেখাচ্ছি।
এসময় তিনি দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে সর্বাত্মক আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য আহবান জানান এবং আগামীকাল সাড়ে তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেন।