বাবা দিবস

ভালো-মন্দ বোঝার আগেই বাবাকে হারিয়েছি

আফসানা মিমি ও আক্য মারমা 
আফসানা মিমি ও আক্য মারমা   © টিডিসি রিপোর্ট

বাবা এক অমোঘ ছায়া বেষ্টনী। এক বটবৃক্ষের নাম যার ছায়াতলে আঘাত হানতে পারে না কোন ক্লেশ। বুকের পাঁজর দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখা এক আশ্বাসের নাম বাবা। নিজের ঘাম ও শ্রমের মূল্যে সন্তানের স্বপ্ন প্রণেতা বাবা। কেমন অনুভূত হয় যদি মাথার উপর থেকে সে বাবা নামক ছত্রটা হারিয়ে যায়!

আজ বাবা দিবস, বাবাকে ভালোবাসা জানানোর দিন। তবে বাবা হারা সন্তানগুলো আকাশের দিকে তাকিয়ে অলক্ষ্যে তাদের ভালোবাসা জ্ঞাপন করেন। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন দুজন শিক্ষার্থী বাবা ছাড়া বাবা দিবস কাটানোর ব্যথা কাতর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে। তাদের কথাগুলো শুনেছেন হুমায়রা রহমান।

ভালো-মন্দ বোঝার আগেই বাবাকে হারিয়েছি
বাবাকে হারাই খুবই ছোট বয়সে। তখনও ভালো-মন্দ ততটা বুঝতে পারিনি। বাবা যেদিন মারা যাবে তার দুদিন আগে আমাকে বলেছিলো আফসানা মা আমার বুকে আর ব্যথা হচ্ছে না। তখন বুঝতে পারিনি বাবা আমাদের মুখে হাসি দেখার জন্য কথাটা বলেছিলেন। নিজের দুঃখ নিজের বুকে চাপা রেখে আমাদের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন।তিনি জানতেন তার জীবন আয়ু মাত্র দুই মাস। বাবার কথা শুনে তখন মনে হয়েছিলো আমার পৃথিবীর সব সুখ ওই কথাটাতেই।

আস্তে আস্তে বড় হই। যখন বন্ধুদের দেখতাম ঈদের ছুটিতে তাদের বাবারা নিতে আসতো তখন বুকের বাঁ পাশে প্রচণ্ড কষ্ট অনুভব হতো। আজও বাবার একটা কল আমার ফোনে আসে না। প্যারালাইসিস মাকে নিয়ে জীবন যুদ্ধের একাকী যোদ্ধা আমি। বাবাহীনা এতটা বছর অতিক্রম করার পরেও বাবা হারানোর ব্যথাটা যেন এতটুকুও কমেনি। পবিত্র ঈদুল আজহা ১৭ জুন, যা আমার বাবার মৃত্যুদিন। দীর্ঘ এক নিঃশ্বাসের ভেতর দিয়ে কেটে যায় এমন উৎসবের দিনগুলো।

আফসানা মিমি 
ফলিত গণিত 
গণ বিশ্ববিদ্যালয় 

বাবার মৃত্যুর পর আশ্রমে ৪ বছর কাটিয়েছি
বট গাছ যেমন ছায়া দেয়, তেমনি বাবার ছায়া সন্তানকে আগলে রাখে সকল ঝঞ্ঝা থেকে। মাথার ওপর থেকে যখন সে বটগাছটা উঠে যায় সেই সন্তানই বোঝে পৃথিবীর নির্মমতা কতটা ভয়াবহ। বাবা নামক এই বটগাছকে হারিয়ে ছিলাম সেই প্রথম শ্রেণিতে থাকতেই। দুই ভাইকে নিয়ে দিশেহারা মা আমাকে দিয়ে এসেছিলেন আশ্রমে। সমবয়সি সকলেই যখন বাবা-মায়ের হাত ধরে ঘুরেফিরে তখন আমি সময় কাটিয়েছি আশ্রমে চার দেয়ালে।

চার বছর অতিক্রম হওয়ার পর আমি বাড়ি চলে আসি। তখন বিধাতা আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল অন্য রূপে। আমার চাচা আমার বাবা সমতুল্য। তিনি আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। আমার ও আমার পরিবারের খরচ যুগিয়েছেন।

আজ আমি বড় হয়েছি বাস্তবতা বুঝতে শিখেছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি বিদ্যুতের কাজ করেছি। ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছি। তবুও বাবার অভাব অপূরণীয়। কোনো সন্তানই ততক্ষণ বাবার অভাব বুঝবে না, যতক্ষণ না সে নিজে বাবা হয়।

আক্য মারমা 
বাংলা বিভাগ 
গণবিশ্ববিদ্যালয়

 

সর্বশেষ সংবাদ