মিয়ানমার থেকে গুলি, খাদ্য সংকটে সেন্ট মার্টিনের ১০ হাজার মানুষ
মিয়ানমারের দিক থেকে বাংলাদেশে চলাচলকারী নৌকা লক্ষ্য করে গুলির ঘটনায় আতঙ্কে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের মধ্যে নৌ চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে দ্বীপে বসবাসরত প্রায় ১০ হাজার মানুষ বেশ সংকটে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সেন্ট মার্টিনের বেশিরভাগ দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুত ফুরিয়ে আসছে। কারণ, নিরাপত্তার জন্য সেখানে মালামাল পৌঁছানো যাচ্ছে না।
এ ঘটনার ফলে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের মধ্যে চলাচলকারী অনেকেই আটকা পড়েছেন। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আদনান চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিকল্প পথে চারটি বোটে করে সেন্ট মার্টিনে আটকা পড়া কিছু মানুষকে বুধবার টেকনাফ আনা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বুধবার তার দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেছেন টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদে বাংলাদেশের ট্রলার ও স্পিডবোটে মিয়ানমার থেকে গুলি করা হচ্ছে। তবে কারা গুলি করেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। একই সঙ্গে গুলি করার ব্যাপারেও অস্বীকার করেছে মিয়ানমার সরকার।
তবে সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলছেন তারা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন যে মিয়ানমার অংশে নাফ নদীতে তাদের সরকারি বাহিনী নৌযানে করে পেট্রল দিচ্ছে। তারাই গুলি করছে আমাদের নৌযানগুলোতে, এটা তো দেখাই যায়। তাদের ইউনিফর্মও দেখা যায়।
গত ৫ জুন সেন্টমার্টিন থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের একটি দল নির্বাচনে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি নিয়ে টেকনাফে ফেরার সময় তাদের নৌযানকে লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা ঘটে। সেদিন সন্ধ্যায় নাফ নদীতে বদরমোকাম এলাকার উল্টো দিক থেকে এলোপাথাড়ি গুলি ছোঁড়া হয়। এরপর ৮ জুন টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার সময় গুলির মুখে পড়ে একটি মালবাহী ট্রলার। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সকালে স্পিডবোটে করে একজন রোগী নেয়ার সময় স্পিডবোট লক্ষ্য করে দশ রাউন্ডের মতো গুলি হয়, যার কয়েকটি স্পিডবোটেও লেগেছে।
কিন্তু বাংলাদেশি নৌযান লক্ষ্য করে কারা এসব গুলি করছে সে সম্পর্কে কোন ধারণা পাওয়া গেছে কি-না জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন এটি নিশ্চিত হওয়া কঠিন কারণ ওই অংশে (মিয়ানমার)বেশ কিছুদিন ধরে তাদের সরকারি বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াইয়ের খবর পাচ্ছেন তারা। তিনি আরও বলেন, কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও আমরা নৌ চলাচল শুরু করতে পারিনি। নৌযানে গুলি হচ্ছে। তাদেরই কোন পক্ষ এটি করছে। ওই অংশে (নাফ নদীর মিয়ানমার অংশে) তো জাহাজের অবস্থান দেখা যাচ্ছে। সংকটের অবসান না হওয়া পর্যন্ত তাই নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সৈয়দ আলম জানান, সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ দুই অংশেই লোকজন আটকা পড়ে আছে। নাফ নদী দিয়ে যেতেই পারছি না। আমাদের দিকে গুলি চালাচ্ছে। আজ অন্য দিকে দিয়ে সাগর পথে চারটি বোটে করে লোক গেছে। এটা খুবই ঝুঁকির মধ্যে করতে হচ্ছে কারণ ওখানে কোন জেটিই নেই। এছাড়াও দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে প্রতিদিন অন্তত দুটো বোট আসা যাওয়া করতো। সাত দিন ধরে সব বন্ধ। দ্বীপের দোকান পাট খালি হতে শুরু করেছে। মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।