স্থলভাগে টানা ৪৮ ঘণ্টা ঘুরেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল, নেপথ্যে যে কারণ
ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূলে স্পর্শ থেকে শুরু করে নিম্নচাপ পর্যন্ত অন্তত ৪৮ ঘণ্টা স্থলভাগে ঘুরেছে। ফলে সারাদেশে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বয়েছে দীর্ঘ সময়। আজ মঙ্গলবারও (২৮ মে) ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সাগরে ব্যাপক তাপ তৈরি হচ্ছে। সাগরে ১ ডিগ্রি তাপ বাড়লে বায়ুপ্রবাহ ৭ শতাংশ বাড়ে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে বৃষ্টির মাধ্যমে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, রেমাল প্রায় ৪৮ ঘণ্টা উপকূলে ছিল। ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে ঘূর্ণিঝড়গুলো আঘাত হানে, সেগুলো দুই থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে স্থল নিম্নচাপ থেকে দুর্বল হয়ে ভূখণ্ড অতিক্রম করে যায়। কিন্তু রেমাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ভূখণ্ডে তা অবস্থান করে দুর্বল হতে পারে।
মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) ভোর ৫টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের ২০ জেলার ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে। এ সময় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিও হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজশাহী, দিনাজপুর, পাবনা, রংপুর, বগুড়া, টাঙাইল, ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব অথবা দক্ষিণ দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এবার ঘূর্ণিঝড়টি ভয়ংকর রূপ ধারণ না করলেও দীর্ঘ সময় উপকূলে অবস্থান করেছে। সাগরের বুকেও দীর্ঘ সময় ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত ২২ মে বঙ্গোপসাগরে এলাকায় লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। তা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হয় শনিবার। রোববার সকালে পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এদিন বিকেলে এর অগ্রভাগ স্থলভাগ স্পর্শ করে।
ঘূর্ণিঝড়টি নিম্নচাপ আকারে পুরোপুরি বিদায় নেবে আজ মঙ্গলবার। অথচ এর আগের ঘূর্ণিঝড়গুলো দুই থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে ভূখণ্ড অতিক্রম করেছে। সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি ঝরেছে। তবে রেমাল ব্যতিক্রমী আচরণ করেছে। এর প্রভাবে টানা আড়াই দিন বৃষ্টি ঝরবে দেশে। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আবহাওয়া ও জলবায়ুতে পরিবর্তন হচ্ছে। এতে দুর্যোগের চরিত্রে পরিবর্তন নিয়ে আসছে। এ ঝড় থেকে সে শিক্ষা পাওয়া গেল।
আরো পড়ুন: ঢাকাসহ ২০ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস
আবহাওয়াবিদ আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল সৃষ্টির সময় বঙ্গোপসাগরে ছিল উষ্ণতা। এ সময়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ২৬ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু দু’মাস ধরে তাপমাত্রা ছিল ২৯ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ বিষয়ে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়গুলোর গতি (ট্রান্স স্পিড) খুবই ধীর হবে। আমেরিকার আবহাওয়া বিজ্ঞানী জেমস খিন ১৯৪৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রমাণ পেয়েছেন, বিশ্বব্যাপী ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ গড়ে ১০ শতাংশ কমেছে। স্থলভাগে প্রবেশের পর কমেছে ২০ শতাংশ। গতি কমে যাওয়ায় সমুদ্রে অনেক বেশি মেঘের সৃষ্টি করছে। ফলে স্থলভাগে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে।