২৭ মে ২০২৪, ০৮:৫৯

উপকূল পার হচ্ছে রেমাল, ২৬ লাখ লোক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন 

  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ উপকূল এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে বঙ্গোপসাগর উপকূলে আঘাত হেনেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্র বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শেষ করেছে। আর দুই ঘণ্টার মধ্যেই এটি প্রবল থেকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। ঘূর্ণিঝড়টির পুরো প্রভাব শেষ হতে আরও পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লাগতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝডড়ের প্রভাবে সারাদেশে দমকা হাওয়ার সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। রেমালের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন রয়েছেন। 

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করে। এরপর উপকূল থেকে শুরু করে সারা দেশে বৃষ্টি শুরু হয়।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে দুর্গত এলাকায় আগামীকাল সোমবার (২৭ মে) সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। রবিবার (২৬ মে) রাত সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

এটি এখন খুলনা ও কয়রার দিকে আছে। এখনো এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় অবস্থায় আছে। তবে দুই ঘণ্টার মধ্যেই এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এরপর এটি নিম্নচাপে পরিণত হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পুরোপুরি শেষ হতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লাগতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ সারা দেশেই বৃষ্টি হবে।

এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল রোববার বিকেল ও সন্ধ্যা থেকে বাগেরহাট, ভোলা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। এতে মুঠোফোনের চার্জ হারিয়ে অনেকে হয়ে পড়েছেন যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। ঢাকা থেকে গ্রামে থাকা স্বজনদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে না পাড়ার কথাও প্রথম আলোকে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন।  

গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।

ঝড়ে প্রাথমিকভাবে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ঝড়ের প্রভাবে হওয়া অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে বরগুনার আমতলীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। 
 
ঘূর্ণিঝড়ের আগে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বাড়ি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে পড়ে গিয়ে শওকাত মোড়ল (৬৫) নামের এক ব্যক্তি মারা যান। উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তিনি শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের প্রয়াত নরীম মোড়লের ছেলে।

অন্যদিকে রিমালের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে শরীফুল ইসলাম (২৪) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ভেঙেেছে বাঁধ

বরগুনার প্রধান তিন নদীতে জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড পশরবুনিয়া গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ প্রায় ৬০০ মিটার ভেঙে পায়রা নদীতে বিলীন হয়েছে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে পানির চাপে আমতলীর পরশুরবুনিয়া এলাকার বাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামতের কাজ শুরু করেছি। এ ছাড়া যেসব বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো দ্রুত মেরামত করা হবে। জেলার এক হাজার মিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে।’

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামসংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর থেকে পানি গড়িয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে সেখানকার চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

কক্সবাজারে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরাটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর নুনিয়াছটাসহ অন্তত ২১টি গ্রাম। এসব গ্রামের হাজারো মানুষকে গৃহপালিত প্রাণী, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, কাপড়চোপড় নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে শহরের দিকে ছুটতে দেখা যায়। উপকূলের মানুষের আশ্রয়ের জন্য শহরের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাবলিক হল ও কিছু হোটেল খুলে দেওয়া হয়। কক্সবাজার পৌরসভার নাজিরারটেক উপকূলে শুঁটকি উৎপাদনের মহাল রয়েছে প্রায় ৭০০টি। জোয়ারের পানিতে ৩০০টির বেশি মহাল পানিতে ডুবে গেছে।

বরিশাল নগরের নিম্নাঞ্চলসহ অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বরিশাল নগরের রূপতলীর জিয়ানগর, খ্রিষ্টানপাড়া, পলাশপুর, বেলতলা, মোহাম্মদপুর, রসুলপুর, দক্ষিণ রূপাতলী, ভাটিখানা, কাউনিয়া, প্যারারা রোড, সদর রোড, কেডিসি, ত্রিশ গোডাউন, দপদপিয়া ও কালিজিরা এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় তারা ঘরবন্দী রয়েছে। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সড়ক চলে গেছে পানির নিচে।

বাগেরহাটে ঝোড়ো হাওয়ায় সঞ্চালন লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রোববার সন্ধ্যা থেকে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে।

নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপসহ কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিনাজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেড়িবাঁধ না থাকায় নিঝুম দ্বীপের সব কটি গ্রাম সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নিঝুম দ্বীপের প্রধান সড়কের ওপরে ২ ফুট উচ্চতায় পানি প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে অনেকের মাছের খামার ও পুকুরের মাছ। অনেক জায়গায় মানুষের বসবাস করা ঘরেও পানি ঢুকে গেছে।’