এবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন করা সনদেই ১২৬ দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ‘এপসটিল কনভেনশন-১৯৬১’ -তে স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশে দূতাবাস নেই এমন দেশে যেতে সনদ সত্যায়নের জটিলতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতদিন এ সকল দেশে যেতে অন্যদেশের দূতাবাসের দারস্থ হতে হতো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং ব্যবসায়ীদের। কনভেনশনে স্বাক্ষর করলে শুধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন করা সনদ কিংবা নথি গৃহীত হবে বিশ্বের ১২৬টি দেশে। সোমবার (২১ মে) মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘এপসটিল কনভেনশন-১৯৬১’ -এ স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এই তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
কনভেনশনে স্বাক্ষর করার পর বিদেশে পড়তে যেতে আগ্রহী শিক্ষার্থী বা ব্যবসা করতে আগ্রহী ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ধরনের সনদ সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া সহজ করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ চালু হওয়া নতুন নিয়মে শিক্ষা, ব্যবসা ও অন্যান্য আইনি সনদ, যা বিদেশে প্রয়োজন হতে পারে, সেগুলোর সংগ্রহ প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যাবে।
বর্তমানে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাসনদ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করেন। এরপর যে দেশে তারা যেতে আগ্রহী ওইসব দেশের দূতাবাস বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সেটি আবার সত্যায়িত করার পরে বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিলে সেটি গ্রহণ করা হয়। একই বিষয় প্রযোজ্য ব্যবসায়ীদের জন্যও। তাদের বিভিন্ন বাণিজ্যিক সনদ যেমন- ট্রেড লাইসেন্স বা মেমোরান্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন দেশে সত্যায়িত করার পরে বিদেশি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সত্যায়িত করতে হয়।
বাংলাদেশে দূতাবাস না থাকলেও এমন ৯০টি দেশের দূতাবাস ভারতের নয়াদিল্লীতে থাকায় সেসব দেশের জন্য সনদ সত্যায়নে নয়াদিল্লী যাওয়ার প্রয়োজন পড়ত বাংলাদেশিদের। কনভেনশনে স্বাক্ষরের পর আর নয়াদিল্লী যেতে হবে না। এতে অনেক বড় ভোগান্তি, সময় এবং অর্থ সাশ্রয় হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, ‘এপসটিল কনভেনশন-১৯৬১’ - এ বাংলাদেশের পক্ষভুক্ত হওয়ার বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ১৯৬১ সালের একটা কনভেনশন আছে, যেখানে ১২৬টি দেশ সদস্য। বাংলাদেশও এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করার জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়েছে।
এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষার্থী বা অন্য কোনো ব্যক্তি বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম ডকুমেন্ট বা কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দেশে গিয়ে ভেরিফিকেশন করতে হয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করে, তারপর সেটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সত্যায়িত করে। এরপর যে দেশে যাবে, সেই দেশের দূতাবাসে গিয়ে সত্যায়িত করতে হয়। এভাবে আমাদের দেশের সনদ অন্য দেশে কার্যকর হয়।
মাহবুব হোসেন বলেন, এপসটিল কনভেনশনের যারা সদস্য, তাদের নিয়ম হচ্ছে- সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি ভেরিফাই বা সত্যায়িত করে দেয়, তাহলে দ্বিতীয় দেশে গিয়ে আবার ভেরিফাই করতে হয় না। কনভেনশনের মূল বিষয়টিই হচ্ছে এটা। এতোদিন আমরা সদস্য ছিলাম না। সে কারণে আমাদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিয়ষটি উত্থাপানের পর মন্ত্রিসভা খুব ইতিবাচকভাবে বিষয়টি গ্রহণ করে এবং অনুমোদন করে। এই কনভেনশনে স্বাক্ষর হওয়ার ফলে ইউরোপ আমেরিকার দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে আর এসব ভোগান্তি হবে না এবং ব্যয় সাশ্রয়ী হবে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশের যেসব মন্ত্রণালয় সত্যায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত যেমন শিক্ষা বা আইন মন্ত্রণালয় তাদের কার্যক্রম সমন্বয় করে একটি ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করা হবে যাতে করে সেবাগ্রহনকারীরা সহজে সত্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে।