২১ মে ২০২৪, ১২:১৮

আজ চা দিবস, চা খাওয়া কি শুধুই অভ্যাস?

আজকের দিনটি শুধুই চা প্রেমীদের  © সংগৃহীত

আজ ২১ মে বিশ্ব চা দিবস। তাই বলা যায়, আজকের দিনটি চা প্রেমীদের দিন। তারা চাইলে আজকের দিনটি উদযাপনে একত্রিত হতে পারেন, কিংবা মেতে উঠতে পারেন চা আড্ডায়। ‘এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই, ডাইনে ও বায়ে আমি তোমাকে চাই…’। কবীর সুমনের এই গানের মধ্যেই স্পষ্ট, চা আমাদের কত আপন। চা প্রেমী মানুষদের কাছে এটি একটি আবেগের নাম। কারণ তারা মন ভালো থাকলে চা খায়, মন খারাপ থাকলে চা খায়, ঠাণ্ডা লাগলেও চা খায় আবার গরম লাগলেও চা খায়। চায়ের পরে আবারও চা।

চা খাওয়া শুধুই কি অভ্যাস? নাকি এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে? অনেকের ধারণা, চা খাওয়ার কোনো উপকারিতা নেই। আসলে এই ধারণা মোটেই সঠিক নয়। কারণ নিয়মিত চা খেলে পাবেন অনেকগুলো উপকার। সারাদিনের সতেজ অনুভূতির জন্য হলেও এক কাপ চায়ের প্রয়োজন পড়ে। সেইসঙ্গে বাঁচা যায় বিভিন্ন অসুখ থেকেও।

বাংলাদেশে সাধারণ দুই ধরনের চায়ের চলন বেশি। রং চা ও দুধ চা। মশলা চা ও অবশ্য বেশ প্রচলিত। তবে মরিচ চা, বেল চা, কমলা চা, মাল্টা চা, জাফরান চা, লবণ চা, জবা ফুলের চা, পাটপাতার চা, শিউলিপাতার চা, বাসকপাতার চাসহ বিশ্বজুড়ে অগণিত চায়ের ধরণ পাওয়া যায়। বিশেষ করে চীনে চা পস্তুতের প্রণালি চলে গেছে শিল্পের পর্যায়ে।

চা যে শুধু মনের তৃপ্তি মেটাতে পারদর্শী তা-ই নয়, এই পানীয়ের রয়েছে ঔষধি গুণও। বিশ্বব্যাপী চায়ের চাহিদাও অনেক। ন্যাশনাল টুডে’র তথ্য অনুযায়ী, প্রতি সেকেন্ডে মানুষ ২৫ হাজার কাপ চা পান করে বিশ্বজুড়ে। অর্থাৎ প্রতিদিন দুই বিলিয়ন কাপেরও বেশি চা পান করা হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও চায়ের রয়েছে বিশাল ভূমিকা। এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। ফলে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও অর্থনীতি দুটি ক্ষেত্রেই চা জড়িয়ে আছে অতপ্রতভাবে।

২০০৫ সালে চা উৎপাদনকারী দেশগুলো এক হয়ে আন্তর্জাতিক চা দিবস পালন করে। এই দেশগুলো হলো- শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মালয়েশিয়া ও উগান্ডা। পরে ২০১৯ সালে ২১ মে বিশ্ব চা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ চা দিবসকে হ্যাঁ বলে। ২০২০ সালের ২১ মে জাতিসংঘ প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব চা দিবস পালন করে।

ধারণা করা হয়, বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চা পানকারীদের সংখ্যাও বাড়বে। ভারত ও চীনে চায়ের ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। চা পানে এই দুটি দেশ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩৭ শতাংশ অবদান রাখে। চা মূলত চীন থেকে এসেছে। আর গরম চায়ের আছে একটি দীর্ঘ ইতিহাস।

চীন দেশই চায়ের আদি জন্মভূমি। ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে চীনে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। ভারতবর্ষে অবশ্য চা আসে আরও পরে। ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারতবর্ষে চায়ের চলন ও বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা সিলেটে সর্বপ্রথম চায়ের গাছ খুঁজে পায়। এরপর ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় শুরু হয় বাণিজ্যিক চা-চাষ। আর এভাবেই ধীরে ধীরে চা ছড়িয়ে পড়তে থাকে বিশ্বজুড়ে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ এই পানীয়ের প্রেমে পড়তে থাকে।

গরম চা কীভাবে আবিষ্কৃত হলো, তার অবশ্য একটি মজার ইতিহাস আছে। বলা হয়, প্রায় ৫ হাজার বছর আগে একজন চীনা সম্রাট গরম পানির কাপ নিয়ে একটি গাছের নিচে বসেছিলেন। তখন কিছু কিছু শুকনো পাতা ওই কাপে এসে পড়ে। পরে সম্রাট সেই পানীয় পান করে মুগ্ধ হন। এভাবে গরম চায়ের সঙ্গে মানুষের পরিচয় ও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যদিও এই গল্প কতটা সত্যি তা বলা মুশকিল। কিন্তু শত শত বছর ধরে মানুষ গরম চা পান করে আসছে, এ ইতিহাস অকাট্য।

আধুনিক ব্যস্ত জীবনে চাকে সমীহ করে না এমন মানুষ কম আছে। জানা যায় প্রায় ২০ লাখেরও বেশি উপায়ে চা বানানো যায়। চা পান করে দিনটি উদযাপন করতে পারেন। চা পান করলে নানাবিধ উপকারও পাওয়া যায়। আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন, যারা সকালে ঘুম থেকে উঠেই কাপভর্তি চা পান করে দিন শুরু করেন। তবে চাপ্রেমীদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা দুধ চা পান করতে বেশি পছন্দ করেন।