প্রধানমন্ত্রীকে না জানিয়েই ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত: মন্ত্রিপরিষদ সচিব

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন  © ফাইল ফটো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে না জানিয়েই পাঁচদিন আগে রাজধানীর সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। সোমবার (২০ মে) মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এ কথা বলেন তিনি। ওই বৈঠকে নির্ধারিত আলোচ্য সূচির বাইরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি জানতেন না। উনার নজরে আনা হয়নি। একটা কমিটির পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তটা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমার সঙ্গে আলোচনা করাটা উচিত ছিল, আমাকে তোমরা জানাওনি। এদের জীবিকার কী ব্যবস্থা তোমরা করেছ?

“এরা সংখ্যায় অনেক, জীবিকার ব্যবস্থা না করে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা যৌক্তিক মনে করেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রেগুলেশনের মাধ্যমে তাদেরকে রেগুলেট করা যেতে পারে। কিন্তু তাদের জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অটোরিকশা নিয়ে একটি ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্নভাবে পত্রিকায় আসছে। অটোরিকশা চালকরা তাদের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে এবং তিনি সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, তাদের জীবন ও জীবিকার বিষয়টি উপেক্ষা করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।

“উনি বলেছেন, তাদের জীবিকার ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে। একটি বিধিমালার মাধ্যমে এটা রেগুলেট করতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং তাদেরকে নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দেওয়া হবে। যেই এলাকার মধ্যে থেকে তারা রিকশা চালাবেন। মহাসড়কে বা বড় সড়কে তারা যেতে পারবে না, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রচলিত যেই আইনগুলো আছে সেগুলোতে প্রয়োজনীয় সংশোধন করার জন্য সড়ক বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন।”

গত বুধবার (১৫ মে) ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত কোনো রিকশা চলাচল করতে পারবে না বলে ঘোষণা আসে। বিআরটিএ ভবনে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ব্যাটারিচালিত কোনো গাড়ি যেন ঢাকা সিটিতে না চলে। আমরা ২২টি মহাসড়কে নিষিদ্ধ করেছি। শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, চলতে যেন না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিদ্যুৎচালিত তিন চাকার যানগুলো অটো, ইজিবাইকসহ নানা নামে পরিচিত। দুর্ঘটনার জন্য সড়কে মোটরবাইক এবং ইজিবাইকের চলাচলকে দায়ী করেন তিনি। সভায় ঢাকার দুই মেয়রও শহরের মধ্যে এসব ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধের বিষয়ে তাদের সম্মতি জানিয়েছিলেন।

পরে ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকায় সড়ক অবরোধ করেন চালকরা ও গ্যারেজ মালিকরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংক্ষুব্ধ চালকদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে।

চালকদের আন্দোলনের মুখে ব্যাটারিচালিত বাহনকে ছাড় দেওয়া হলো কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব বলেন, এটা আপনি একটা খুবই নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে একটা কথা বললেন। এই কথাটা বলা উচিত হয়নি।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমার সাথে আলোচনা করা হয়নি। আমি বিষয়টি জানিনি। আমার সাথে তোমাদের কথা বলা উচিত ছিল।’ উনি এভাবেই মন্তব্য করেছেন। তাদের জীবিকার ব্যবস্থা না করে এরকম একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি।”


সর্বশেষ সংবাদ