নিমিষেই ‘ঋণখেলাপি’ পিতার পুত্র বনে গেলেন গর্বিত রাফসান
মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি উপহার দিয়ে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন রাফসান দ্য ছোট ভাই ওরফে ইফতেখার রাফসান। তার কাণ্ডে আবেগে আপ্লুত বাবা-মায়ের চোখে খুশির অশ্রু গড়িয়েছে। রাফসানের এ পদক্ষেপে তিনি তার মা-বাবাকে নিয়ে চার বছর আগে দেখা স্বপ্নপূরণ করলেন। তবে এ খুশি বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তার কেনা ওই গাড়িকে কেন্দ্র করে শুরু হয় বিতর্ক ও সমালোচনা। এর মধ্যেই সামনে আসে তার মা-বাবার আড়াই কোটি টাকার ব্যাংকঋণের একটি তথ্য।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাফসান ও তার পরিবারকে কথা শোনাতে ছাড়েননি নেটিজেনরা। শুরু হয় পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্ক। তবে অবশ্য বিষয়টি রাফসানকে ঘিরে নয়, মূলত তার মা-বাবার ব্যাংকঋণ কেন্দ্র করে ছড়াচ্ছে উত্তাপ। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাফসান ও তার পরিবারকে তুলোধুনা করছেন নেটিজেনরা। পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্ক চলছে।
এ তালিকায় যুক্ত হন সেলিব্রেটিদের সাথে সাধারণ ব্যবহারকারীরাও। শাকিব মোস্তাবী নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, রাফসান দ্যা ছোটভাই কান্ডের শেষ কথা হল লেখাপড়া মোটেও ওভাররেটেড না। শুধু কন্টেন্ট বানিয়ে বাবাকে কোটি টাকা দামের গাড়ি কিনে দেওয়ার কাহিনী শুনে অনেকে লিখেছিল লেখাপড়া ওভাররেটেড।
তিনি লিখেন, দিনশেষে পড়ালেখা জানা একজন মানুষের সামান্য একটি লেখা ওই কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের সুতা বের করে ছাড়লো। গর্বিত পিতার পুত্রটি ঋণখেলাপি পিতার পুত্র বনে গেল নিমিষেই। সুতরাং ফ্রেন্ডলিস্টে যারা এখনো পড়ালেখা করছেন, তারা এসব ভুজুং ভাজুং বাদ দিয়ে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করেন। দুনিয়াটা লেখাপড়া জানা মানুষেরাই চালায়।
জনপ্রিয় লেখক ও উপস্থাপক আব্দুন নূর তুষার লিখেছেন, রাফসান দ্যা ছোটোভাইয়ের বাবার ঋণ আছে ও তিনি খেলাপি। এটার জন্য কি রাফসান দায়ী? উল্টো সে গাড়ি দেয়াতেই এটা বের হয়েছে। বাবার জীবদ্দশায় তার ঋণের দায় নিতে সে বাধ্য না। রাফসানের রুজি হালাল, তাই সে দিয়েছে মনের আনন্দে। বাপ খেলাপি। তার উচিত ছিল ছেলেকে বলা- গাড়ি ফেরত দিয়ে টাকাটা ব্যাংককে দিতে।
আরও পড়ুন: এই দেশে বাবা-মায়ের জন্য কিছু করে পোস্ট দিয়েন না: রাফসান
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম লিখেছেন, আমার বয়স যদি এখন ১৫-১৮- এর মাঝে থাকতো তাহলে আমি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক কিংবা লেখক হওয়ার বদলে রাফসান দ্যা ছোট ভাই হতে চাইতাম। ইনফ্যাক্ট এখনও আমি রাফসানই হতে চাই। কারণ আমি গরীব-মিসকিন হয়ে মরতে চাই না। আপনি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হলে বেতন পাবেন ১২-১৫ হাজার টাকা। ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হলে পাবেন ৩০-৬০ হাজার টাকা। নিজ পেশায় সফল হলেও আপনার বেতন এমনই থাকবে। খুব বেশি বাড়বে-কমবে না।
তিনি লিখেন, এর চাইতে রাফসান যে পেশা বেছে নিয়েছে সেখানে সে সফল হয়ে এখন কোটি টাকা দামের অডি গাড়ি কিনতে পেরেছে। এমন হাজারও ভিডিও মেকার আছে। তারা কিন্তু পারছে না। কিন্তু আপনি জানেন অন্তত সফল হলে ভালো টাকা-পয়সা পাবেন। শিক্ষক কিংবা লেখক হলে আজীবন মাস শেষে হিসাব করেই চলতে হবে! দোষটা রাফসানের নয়। সে তার জায়গায় সফল। দোষটা আপনার। আপনি রাফসান হতে পারেননি।
আদেলী এদিব খান নামে একজনে লিখেছেন, রাফসানের অডি গাড়ি কেনা নিয়ে চারপাশে কি শুরু হলো ভাই? তিনি একজন ইউটিউবার। তার ইনকামের সাথে অন্য প্রফেশনের তুলনার কি আছে? ক্যামেরার সামনে এসে এমন করে টাকা কামানোর জন্য সাহস লাগে। সেটা রাফসানের আছে। আমি মনে করি অন্যদের থেকে রাফসানের কন্টেন্ট অনেক ভালো। সে তার যোগ্যতাই কিনেছে গাড়ি। প্রত্যেক সন্তানের স্বপ্ন মা-বাবাকে নিজের টাকায় কিছু কিনে দেওয়া।
বিষয়টি নিয়ে আর চুপ থাকতে পারেননি রাফসান। নিজের ফেসবুক পেজে দিলেন বিশদ বিবরণ। মঙ্গলবার রাতে নিজের ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে রাফসান বলেন, আমি নাকি ২ কোটি টাকার একটা গাড়ি কিনেছি, আর আমার বাবার নাকি ৩ কোটি টাকার লোন। এখানে কিছু ভুল তথ্য আছে। আমার এই গাড়ির দাম ২ কোটি টাকার আশপাশেও না। ভিডিওতে বাবা-মায়ের ঋণ নেওয়ার কথা স্বীকার করে রাফসান বলেন, এটা আদালতের বিচারধীন। সেখান থেকে নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ করব কীভাবে? কারণ, আদালত তো এখনো নির্ধারণ করে দেননি কত টাকা পরিশোধ করতে হবে।
এদিকে, গাড়ি বিতর্কের মাঝেই সামনে আসে রাফসানের ব্লু ড্রিংকস (BLU) তৈরির কারখানায় অভিযানের খবর। যদিও গত ২৪ এপ্রিলের খবর এখন নতুন করেই সামনে এসেছে। তবে এর গুরুত্ব কোনো অংশেই কম দেখছেন না ব্যবহারকারীরা। ওই অভিযানে ব্লু ড্রিংকস তৈরির কারখানায় নোংরা পরিবেশে মানহীনভাবে প্রোডাক্ট তৈরির অভিযোগে তাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কুমিল্লা নগরীর বিসিক এলাকায় এ কারখানাটির অবস্থান
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা নাসরিন বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে পণ্য বাজারজাত করতে হলে বিএসটিআইয়ের একটি অনুমোদনের সনদ থাকতে হয়। তাদের তেমন কোনো অনুমোদন বা সনদ না থাকায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি পরিবেশের অসংগতি পাওয়ায় তাদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়।