সন্তানের নিরাপদ আশ্রয় মা
‘মা’ প্রত্যেক সন্তানের সবচেয়ে কাছের জন। সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার মায়েরা সন্তানের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে থাকে। মাকে ভালোবাসা কিংবা শ্রদ্ধা জানাতে কোনো উপলক্ষ্য লাগে না। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার ‘বিশ্ব মা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। মা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর চোখে মায়ের মমতার কথা তুলে ধরছেন তানজিদ শুভ্র।
শত প্রতিকূলতায় সন্তানকে আগলে রাখেন মা
সন্তানের ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে নারী জীবনে শুরু হয় মা হওয়ার নতুন এক যাত্রা। একজন মা কখনো কারো তুলনায় কম হয়ে উঠে না। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাস্তার পাগলিও সে মা হওয়ার স্বাদ গ্রহণ করে। বরঞ্চ দেখা যায়, তাদের মানসিক ভারসাম্য ঠিক না থাকার পরে সে যে একজন মা সে তা ভুলে না। কেমন করে সে তার সন্তানকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখে। যতই ঝড়তুফান হোক না কেন সন্তানকে একটা খোঁচাও লাগতে দেয় না।
আমাদের বাঙালি মায়েরা তো এমনই। আসলে এমনই হওয়া উচিত। সন্তানের জন্য সব রকম ত্যাগ স্বীকার করে বসেন। তার নিজের হাতে তৈরি করা ক্যারিয়ারও বিসর্জন দিতে মিনিট খানেক দেরি করেন না। নিজেকে আবদ্ধ করে নেন চার-দেওয়ালের ভেতরে। যেন সে মা সন্তানের উন্নতির সাথে নিজেই এক পা দু পা করে উন্নতি করেই যান। তার সাথে নিজেকে যেন আবার দ্বিতীয় বারের মতো বড় হতে দেখেন।
আর আমরা সন্তানেরা আমাদের আদর্শ মা দের জন্য কতটুকু করেছি বা করতে পেরেছি আমাদের জানা নেই। প্রতিটা সন্তানের উচিত তাদের মা এর জন্য, তাদের এতো ত্যাগের জন্য, অফুরন্ত ভালোবাসার জন্য একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা। যেন এক গর্বিত মা বলতে পারে “ও আমার সন্তান”।
নাজিয়া নূর
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ।
ভালোবাসি 'মা'
তুমি কাকে বেশি ভালোবাসো? বাবা না মাকে? এই প্রশ্নটা ছোটবেলায় বেশ শুনেছি। হ্যাঁ, আমি বাবাকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু আমার মাকে একটু বেশিই ভালোবাসি। আমার সবসময়ের হাসি, কান্নার, ভরসার প্রথম ও প্রধান আশ্রয় স্থল আমার মা। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। একটা শিশু জন্মের পর প্রথম বুলি আওড়ায় মা বলে। প্রথম স্পর্শ মায়ের কাছেই পায়, মা-ই একটা শিশুর প্রথম শিক্ষক, প্রথম বন্ধু, প্রথম ভালোবাসা।
মায়েদের এতো মমতা, এতো ভালোবাসা, এতো আত্মত্যাগ সন্তানদের প্রতি। সন্তানের জীবনের যতো দুঃখ-কষ্ট, অভিমান, অভিযোগ মা সবসময়ই নীরবে ভাগ করে নেয়। দুঃখ আমাকে ছোঁয়ার আগে আমার মা তাকে আপন করে নেয়। আমার দেখা সবচেয়ে নরম মনের, সহজ সরলা, ধৈর্যশীল আমার মা। ২০২১ সালে বাবা-মা, ভাই; আমার পরিবারের তিন সদস্য দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক ভাবে আহত হয়।
ওই সময় আমার মাথায় শুধু একটায় প্রশ্ন ছিলো, আমার মা কি বেঁচে আছে? আমি কি একা হয়ে গেলাম? এমন আরো প্রশ্ন তবে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ফিরে এসেছেন তারা। মায়ের জ্ঞান ফেরার পর প্রথম আমাকে দেখতে চেয়েছিলেন। অচেতন অবস্থায়ও তিনি সন্তানদের নিয়ে ভেবেছেন। মায়েরা এমনই হয়। সবসময়ই ভাবতাম বাবা মাকে আমি সমান ভালোবাসি। দুর্ঘটনা পরবর্তী সময় আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে মাকে ছাড়া কত অচল আমি। অনেক অনেক ভালোবাসি মা। অনেক বেশি ভালোবাসি।
ছাবিহা জামান
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ।
আমার আম্মু, আমার সেরা বন্ধু
আমি যদি আমার সব অনুভূতি মিশিয়ে বলি আমি আম্মুকে ভালোবাসি, তবুও কম হবে বলা। পৃথিবীর এমন কোনো সন্তান থাকার কথা নয় যে তার মাকে ভালোবাসে না। আমিও আমার আম্মুকে ভালোবাসি, আমার আম্মু আমার সেরা বন্ধু। বেদনা সিক্ত দিনের শেষে ঘরে ফিরেই যাকে ঝাপটে ধরে শান্তি পাই, তিনি আমার আম্মু। সুখের কোনো সংবাদ যার বুকে শুয়ে থেকে শেয়ার করি, তিনি আমার আম্মু।
একটা কথা না বললেই নয়, সেই ছোট্ট থেকে আজ অবধি অন্তরে যে ভয় আমাকে সবচেয়ে বেশি চোখের পানি ঝরিয়েছে সেটা হলো মাকে হারানোর ভয়। আজ অবধি নামাজ শেষে কিংবা যেকোনো মুনাজাতে যেটি সবচেয়ে বেশিবার আল্লাহর কাছে চেয়েছি সেটি হলো আমার আম্মু-বাবার নেক হায়াত। আল্লাহ আমার আম্মুকে এবং বাবাকে নেক হায়াত দান করুন।
আবু ছাকিব মো. নাজমুল হক
শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ।
মাকে না বলা কথা
ছোট্ট কিন্তু হৃদয় স্পর্শী শব্দ ‘মা’। পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রুতিমধুর এই ডাক। মা আমার জীবনে প্রথম ও সেরা মানুষ। শত প্রতিকূলতার দিনগুলোতেও মা আমার খামখেয়ালি আবদারগুলো মিটিয়ে দেয়। তখন আমার মন কৃতজ্ঞচিত্তে দোয়া আর ভালোবাসায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বলতে গেলে আমার জীবনে পাওয়া না পাওয়া সবকিছুই আমার মায়ের অবদান। আমার মা অনেক বোকা, কিন্তু অনেক ভালো। আমি অনেক ভাগ্যবতী এমন মাকে পেয়ে।
মা একমাত্র তোমার সাধনাতেই এত ভালো পড়াশোনা আর ভালো রেজাল্ট সম্ভব হয়েছিল। মা, তুমি আমার জীবনের ছোট-বড় সব উত্থান-পতনে, রাগে- দুঃখে, অভিমান-আনন্দে সেরা আশ্রয়। কারণে অকারণে আমি মায়ের সাথে অভিমান হয়। অভিমানী মনে বারবার ভাবি, যাই মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেই, আর এমন করব না। কিন্তু কেন জানি পেরে উঠি না।
মা, তোমাকে ভালোবাসার জন্য অজুহাতের প্রয়োজন হয় না। তবুও বলি এই বিশেষ দিন ঘিরে আমার সব ভুল ক্ষমা করো। তুমি আমার পাশে না থাকলে আমি এতদূর পড়াশোনা করতেই পারতাম নাহ। আমাকে মাফ করে দিও, মা। আর দোয়া করিও আমি যেন তোমাদের গর্ব হতে পারি।
ফেরদৌসি সুমা
শিক্ষার্থী, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া।
মা, তোমাকে অনেক ভালোবাসি
‘মা’ শব্দটি শুনলেই মনে হয় পৃথিবীর সব সুখ এই শব্দে। মা শব্দটি ক্ষুদ্র হলেও এর গভীরতা অনেক। একটি শিশুর প্রথম মুখের বুলি ফোটে মায়ের আঁচল ধরে। মা অতি যত্নে পরম আদর, স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে সন্তানদের আগলে রাখেন। মা যেন সীমার মাঝে অসীম। জীবনের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত মায়ের ভালোবাসার পরিবর্তন হয় না। তাই মা আমাদের সকলের কাছে অতুলনীয় ও অনন্য।
তাই আমাদের সকলকে মাকে সম্মান করতে হবে ও ভালোবাসতে হবে। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর নারী হলেন আমার মা। মা সবার স্থান নিতে পারে কিন্তু মায়ের স্থান কেউ নিতে পারে না। বর্তমানে আমরা কর্ম ব্যস্ততায় ও সময়ের অভাবে মাকে সময়ই দিতে পারি না, বসে দুটো কথা বলতে পারি না।
আমাদের উচিত মাকে সময় দেওয়া, মা যেমন ছোটো থেকে আমাদের যত্নে পরম মায়ায় রেখেছেন ঠিক আমাদেরও উচিত মাকে যত্নে আগলে রাখা। মাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা। মাকে যে আমরা কতটা ভালোবাসি তা বলা হয়ে ওঠে না। তাই এ মা দিবসে এর মাধ্যমে আমরা মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি এবং বলতে পারি, ‘মা তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’
হোসনে আরা আমিরা
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ।