মৃত্যু সনদ জাল করার অভিযোগসহ মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে আরও মামলা

মিল্টন সমাদ্দার
মিল্টন সমাদ্দার  © সংগৃহীত

মানবতার ফেরিওয়ালার মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর সব প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পরিচিত মুখ মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে। ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের মৃত ব্যক্তিদের জাল মৃত্যু সনদ দেওয়ার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এছাড়া মানবপাচার ও অবৈধভাবে আটক রাখার অভিযোগে আরও দুটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।

বৃহস্পতিবার (২ মে) সকালে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সি সাব্বির আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুইটি মামলা দায়ের হয়েছে। জাল মৃত্যু সনদ তৈরির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। অন্যদিকে, তার আশ্রমের টর্চার সেলে মানুষজনকে মারধর করার অভিযোগে আরও একটি মামলা হয়েছে। মানবপাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এর আগে, মানবপাচারের মামলা নিয়ে ডিবি মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মানস কুমার পোদ্দার বলেন, মিল্টন সমাদ্দার তার আশ্রমে মৃত ব্যক্তিদের জাল মৃত্যু সনদ তৈরি করতেন। এক্ষেত্রে তিনি চিকিৎসকের স্বাক্ষর ও সিল জাল করতেন। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতির ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া, মানবপাচার ও অবৈধভাবে আটক রাখার অভিযোগে আরও দুটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।

বুধবার (১ মে) রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ। তার বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে। তিনি তার বাবাকে পেটানোর কারণে এলাকাবাসী তাকে এলাকাছাড়া করে। এরপর ঢাকায় চলে আসেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিল্টন সমাদ্দারের সেবামূলক কর্মকাণ্ডের রয়েছে ব্যাপক প্রচারণা। যেখানে দেখা যায়, অসহায়-দুস্থ মানুষের সেবায় তিনি গড়ে তুলেছেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের একটি বৃদ্ধাশ্রম। রাস্তা থেকে অসুস্থ ও ভবঘুরেদের কুড়িয়ে ওই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় দেন, করেন সেবা-শ্রুষা। জনসেবামূলক এসব কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি নানা পুরস্কারও।

তার ফেসবুক পেজ ঘেঁটে দেখা যায়, আশ্রমে সব সময় আড়াইশ থেকে তিনশ অসুস্থ রোগী থাকেন বলে ফেসবুকে প্রচার করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাস্তায় যারা মারা যান, তাদের দাফন করেন মিল্টন। আবার তার আশ্রমে অবস্থানকালেও অনেকে মারা যান। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মরদেহ দাফন করেছেন বলে মিল্টন দাবি করেন। 

তবে অসহায় মানুষের নামে সংগ্রহ করা অর্থ আত্মসাৎ এবং তাদের কিডনিসহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরির মতো গা শিউরে ওঠা অভিযোগের মুখোমুখি মিল্টন সমাদ্দার। এছাড়া জাল ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি এবং জমি দখলের মতো গুরুতর সব অভিযোগ এখন চাউর হচ্ছে। অসহায়-দুস্থ মানুষের সেবার কথা বলে গড়ে তোলা ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের একটি বৃদ্ধাশ্রম ঘিরে তার অপকর্মের ফিরিস্তি এখন নেটদুনিয়ায় ভাইরাল। সম্প্রতি মিল্টন সমাদ্দারের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়।

আরও পড়ুন: কে এই মিল্টন সমাদ্দার, কী তার অপরাধ

এদিকে মিল্টন সমাদ্দার বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেকে ভালো মানুষ হিসাবে আখ্যা দেওয়ার অপচেষ্টা করলেও সবকিছুতেই রহস্যের জট ঘনীভূত হচ্ছে। এমতাবস্থায় মিল্টনের ভয়ংকর সব অপকর্মের অভিযোগের বিষয় আমলে নিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। জনস্বার্থে এ বিষয়ে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগও গ্রহণ করেছে। ২৮ এপ্রিল মানবাধিকার কমিশন থেকে মিল্টনের অভিযোগের বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও দ্রুত কমিশনে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে বলা হয়েছে। 


সর্বশেষ সংবাদ