দেশে ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি
সারাদেশে দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে তাপদাহ। অতীতে এপ্রিল মাসে দেশে এত দীর্ঘ সময় টানা চরম উষ্ণতার বিস্তার দেখা যায়নি। কখনো তীব্র আবার কখনো অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের বেশকিছু অঞ্চলের ওপর দিয়ে। এরইমধ্যে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পুড়ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা। ১৯৮৯ সালের পর এটাই ৩৫ বছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ১২ শতাংশ। চলতি বছর এখন পর্যন্ত এটিই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিষয়টি নিশ্চিত করে চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, আজ বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস প্রতিষ্ঠার পর সর্বোচ্চ। তিনি আরও বলেন, আপাতত দু-একদিন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে বা একইরকম থাকবে।
এরআগে ২০০৫ সালে ৪৩ ডিগ্রি, ২০১৪ সালে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি ও সোমবার ২৯ এপ্রিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। কিন্তু সব রেকর্ড ভেঙে ৩৬ বছরের ইতিহাসে আজ ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হলো।
দেশের ইতিহাসে ১৯৭২ সালে রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।
৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
জলবায়ু সংক্রান্ত রেকর্ড থেকে বোঝা যায়, গত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশে উষ্ণতার মাত্রা ও এর স্থায়িত্ব বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়েও চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রার গরম অনুভূত হচ্ছে। যে কারণে সাধারণের অস্বস্তিও বেশি।
এদিকে, তাপপ্রবাহের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন দেশের ২১ জেলার বাসিন্দারা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র তুলে ধরেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। সবচেয়ে বেশি উষ্ণতার বিপদে থাকা ২১ জেলা হচ্ছে সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও বাগেরহাট।
এছাড়া দেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ‘হিট স্ট্রোকে’ গত এক সপ্তাহে ১০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে গতকাল সোমবার হিটস্ট্রোকে তিনজন মারা যান। তারা তিনজনই পুরুষ। এ ছাড়া হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: সারাদেশে কবে হতে পারে বৃষ্টি, জানাল আবহাওয়া অফিস
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকাল ৯টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এসব তথ্য জানায়। তারা জানায়, মারা যাওয়া ১০ জনের মধ্যে দুজন মাদারীপুরের। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, হবিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলায় একজন করে মারা গেছেন।
কন্ট্রোল রুম জানায়, এ পর্যন্ত সারা দেশে হিট স্ট্রোকে মারা যাওয়া ১০ জনের মধ্যে আটজন পুরুষ ও দুজন নারী। হিট স্ট্রোকে নতুন করে মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে মাদারীপুর জেলায়। আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম জেলায়।