৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৬

তাপদাহে খোলা-বন্ধ নিয়ে হযবরল অবস্থা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

চলতি এপ্রিলজুড়ে একদিকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে, অন্যদিকে এ তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা-বন্ধ নিয়ে প্রতিদিনই বদল হচ্ছে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা-বন্ধ নিয়ে এক ধরনের হযবরল অবস্থা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন অনেক অভিভাবক। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা। যদিও হাইকোর্টের এমন নির্দেশনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

গতকাল সোমবার (২৯ এপ্রিল) এক আদেশে দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ২ মে (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে শিক্ষকসহ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনা হলে শুনানি নিয়ে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ এ আদেশ দেন।

আদালতের আদেশের পর সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয় ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টার আগামী বৃহস্পতিবার (২ মে) পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছুটির বিষয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা কিছুটা ভিন্ন।

তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, দেশের ২৭টি জেলার মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজ মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে। এর পরদিন বুধবার মে দিবসে (১ মে) সরকারি ছুটি রয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ ছুটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গেল কয়েকদিনে অন্তত ৪-৫ বার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বদল করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও বন্ধ রাখা নিয়ে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, স্কুল খোলা ও বন্ধ রাখা নিয়ে কেন্দ্রে ব্যাপক সমন্বয়হীনতা রয়েছে। হাইকোর্ট বন্ধ রাখার আদেশ দিলেও মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে ভিন্ন নির্দেশনা। এ অবস্থায় স্কুল খোলা নাকি বন্ধ থাকবে তা পরিষ্কার না। চলমান তাপপ্রবাহে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ায় মত দেন তারা।

গত ২৬ মার্চ দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি শুরু হয়। এর একদিন আগে ২৫ মার্চ কলেজগুলো ছুটিতে বন্ধ হয়েছিল। আর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ছুটি শুরু হয়েছিল ২২ মার্চ। পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতর ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশ শেষে গত ২১ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ছিল। তবে দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দীর্ঘ ছুটি শেষেও খোলা হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এসময় অভিভাবকদের পক্ষ থেকেও চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার দাবি ছিল। পরে দফায় দফায় হিট অ্যালার্টের মধ্যে গত রবিবার (২৮ এপ্রিল) সারা দেশের স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় শ্রেণিকক্ষে অসুস্থ হয়ে পড়ে অনেক শিক্ষার্থী। বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক মারা যাওয়ার ঘটনাও আছে।

রবিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সপ্তাহ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ-খোলা নিয়ে বলেন, এলাকাভিত্তিক যদি ৪২ ডিগ্রির ওপর তাপমাত্রা যায়, তাহলে সেখানে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আছেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আছেন, তারা আঞ্চলিক পর্যায়ে আলোচনা করে সেই জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে পারেন এবং সময়সীমাও পরিবর্তন করতে পারেন, এটা অঞ্চলভেদে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সবকিছু খোলা থাকবে। অথচ কিছু হলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে—এ প্রত্যাশা যথাযথ নয়। আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে চাই। পরিস্থিতি তেমন খারাপ হলে অবস্থা বুঝে সরকার ব্যবস্থা নেবে। এ নিয়ে এত আলোচনার প্রয়োজন নেই।

রবিবার দুপুরে মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর এদিন রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সোমবার দেশের পাঁচটি জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ঢাকা ছাড়া বাকি জেলাগুলো হলো চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী। মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এসব এলাকার যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ চাইলে খোলা রাখতে পারবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি নিয়ে এমন হযবরল অবস্থার মধ্যে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন হাইকোর্ট। সোমবার হাইকোর্টের পক্ষ থেকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। শিক্ষাসচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষকসহ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন প্রতিবেদন নজরে আনা হলে শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত এ আদেশ দেন।

গতকাল সোমবার দুপুরে পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত এটিই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এ ছাড়া যশোরে ৪২ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর ঢাকায় ৪০ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সোমবারের নির্দেশনা অনুযায়ী, চলমান তাপপ্রবাহের কারণে আজ মঙ্গলবার দুটি বিভাগের সব জেলাসহ দেশের ২৭টি জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। 

মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সব জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ঢাকা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর এবং বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বন্ধ থাকবে। অবশ্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ২ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।