বর্ষবরণের সময় সংকোচনের প্রতিবাদে উদীচীর কর্মসূচি
পহেলা বৈশাখ, বাংলা বর্ষবরণের আয়োজনের সময় সংকোচন করে সরকারের দেয়া সিদ্ধান্ত না মানার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। পহেলা বৈশাখের দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে উদীচী। বাংলা বর্ষবরণ আয়োজনের অনুষ্ঠান শেষ করার সরকার নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর শুরু হবে উদীচীর অনুষ্ঠান।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে জানান, কয়েক বছর ধরেই বর্ষবরণ উৎসবকে নির্দিষ্ট সময়ের ঘেরাটোপে বেঁধে দেয়ার একতরফা পদক্ষেপ নিয়ে আসছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও সারাদেশে আয়োজিত পহেলা বৈশাখের সব উন্মুক্ত অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শেষ করার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপনে হঠকারি সিদ্ধান্ত প্রকৃতপক্ষে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে নির্জলা আত্মসমর্পণ ছাড়া কিছুই নয়।
উদীচী মনে করে, এর মাধ্যমে পক্ষান্তরে আবহমান বাংলার সংস্কৃতিবিরোধী অন্ধকারের শক্তিকেই আস্কারা দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের অযাচিত সিদ্ধান্ত কোনভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। তাই, এর প্রতিবাদে পহেলা বৈশাখ সন্ধ্যা ৬টায় “বর্ষবরণ মানে না শৃঙ্খল” শিরোনামে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে উদীচী। এছাড়া, সারাদেশে উদীচীর আয়োজনে সমমনা সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যে বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ উৎসব হয় তা যথানিয়মেই আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছে উদীচী। আর সেসব আয়োজনে যথাযথ সহযোগিতা করার জন্য সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বানও জানাচ্ছে উদীচী।
পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব। ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে সব মানুষের মিলিত এই উৎসব এ ভূখণ্ডের চিরায়ত ঐতিহ্য, মূল্যবোধ ও জাতীয় চেতনা বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে। এই উৎসবের সময় নিয়ন্ত্রণ করা হলে অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাসম্পন্ন মানুষকে ঘরে বন্দী করতে যে মৌলবাদী অপতৎপরতা চলছে, তাকেই সহায়তা করা হবে বলে মনে করে উদীচী। সময় সংকোচনের মাধ্যমে উৎসবমুখর বাঙালির প্রাণের উচ্ছাস ও সংস্কৃতিকে দমন করা হচ্ছে।
পহেলা বৈশাখ নববর্ষ অনুষ্ঠান আয়োজনে এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের অবাধ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব বলে উল্লেখ করে অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছে উদীচী।