১০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩০

ঈদে দলীয় সংকীর্ণতা ভুলে দুস্থ-অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো আহ্বান ছাত্রনেতাদের

বেরোবি ছাত্রনেতাদের ঈদ ভাবনা  © টিডিসি ফটো

মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ ১ মাস সিয়াম সাধনার পরে মুসলমানরা এদিন একে অন্যের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করেন। এজন্য ঈদের দিনকে খুশির দিনও বলা হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে সবারই কিছু না কিছু স্মৃতি জমা রয়েছে। বিশেষ করে ছোটবেলার সেই স্মৃতি তোন না বললেই নয়। তেমনি ব্যতিক্রম নয় ছাত্রনেতাদের ক্ষেত্রেও। এবারে ঈদে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে শৈশবের ঈদের স্মৃতিচরণ করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা।

বেরোবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সংগঠক মার্জিয়া বলেন, আমার ছোটবেলার ঈদ উদযাপনের সাথে বর্তমান ঈদ উদযাপন কিছুটা ভিন্ন। দেখা যেতো, ছোটোবেলায় কাজিনদের সাথে ভোরবেলা গোসল করা নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা হতো। কে কার আগে গোসল করতে পারি। এছাড়া গোসল শেষে নতুন জামা পরে ওদের সাথে ঘুরতে যাওয়া, একসাথে নাস্তা করা, মেহেদী পড়া। এগুলোর জন্যই তখন অপেক্ষায় থাকতাম, কবে আসবে ঈদ!

শৈশবের ঈদের স্মৃতিচারণ করে মার্জিয়া বলেন, ছোটোবেলার একটা ঘটনা আমার এখনও মনে পড়ে। আমি গ্রামে বেড়ে ওঠা মানুষ, আমার গ্রামেই জন্ম। শৈশবে ঈদ আসলে সন্ধ্যাবেলা সমবয়সীরা সবাই মিলে নতুন চাঁদ দেখতাম। সেই সময় খড়ের ঢিবির উপর উঠে চাঁদ দেখতে গিয়ে একটা জুতা হারিয়ে ফেলেছিলাম। আম্মু বকা দেবে ভেবে  ভয়ে কান্না করেছি। অবশ্য সেবার বকা খেতে হয়নি।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছুটা ভিন্নভাবে ঈদ পালিত হয় আমার। এখন যেহেতু পড়াশোনার জন্য বাইরে থাকতে হয়— ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকার সুবাদে, হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ি যাওয়ার আমেজটা উপভোগ করি। কে কবে বাসায় যাবো— এসব নিয়ে ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে বলাবলি চলে।

ঈদের ব্যস্ততা নিয়ে মার্জিয়া বলেন, ঈদুল আযহা যেমন একটু ব্যস্ততায় কাটে, মাকে কাজে সাহায্য করি। ঈদুল ফিতরের দিনটা একটু ভিন্নভাবে কাটে। সকালের গোসল শেষে আম্মুর বানানো বিশেষ পায়েস খেয়ে আমি টাকা নিয়ে বসি ফিতরা দেওয়ার জন্য। ঈদের নামাজের আগে ফিতরা দেওয়া শেষ করে আম্মুর সাথে নামাজ আদায় করি। এরপর কাজিনদের সাথে দেখা করি, ওরা আসে আমাদের বাড়ি, কিংবা আমিও যাই... একসাথে খাওয়া দাওয়া হয়, প্রতিবেশিদের সাথে কুশল বিনিময়।

তিনি বলেন, এখন আর আগের মতো ঈদের দিনটায় ঘুরতে যাওয়া হয় না। বিকেলের দিকে হয়ত একাডেমিকের বাইরে কোনো বই পড়া, ছোটোভাইয়ের সাথে টেলিভিশন দেখা অথবা ওর সাথে দাবা নিয়ে টুকটাক খেলতে বসা। এভাবেই সময় কাটে। ঈদের খুশি ছড়িয়ে পড়ুক চারদিকে, প্রতিটি মুহূর্ত হোক পরিশুদ্ধ ও আনন্দময়, এই প্রত্যাশা।

বেরোবি ছাত্রদলের সভাপতি আল আমিন বলেন, ঈদ আমাদের মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি অত্যন্ত খুশির দিন। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর এই ঈদ আসে। কাজেই এটি আমাদের ত্যাগ, আত্মসংযম, দানশীলতা ও সহমর্মিতার শিক্ষা দিয়ে যায়। শৈশবের ঈদ এবং ছাত্রনেতা হিসেবে ঈদ উদযাপনের ধরনটা অনেকটা ভিন্ন। এখন ঈদের আগে যেমন দল এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনের ইফতারগুলোতে উপস্থিত থাকতে হয়, তেমনি ঈদের ছুটিতে ক্যাম্পাসের নেতাকর্মীদের সাথে, দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে কুশল বিনিময় করতে হয়।

তিনি বলেন, ঈদে নিজ এলাকার অসহায়, দুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। যদিও একজন ছাত্রনেতা হিসেবে ইচ্ছেমতো করতে না পারার আক্ষেপটা থেকেই যায়। এলাকার বড়, ছোট ভাই ও বন্ধুদের সহায়তায় প্রত্যেকবার আমি একটি গণ ইফতারের আয়োজন এবং ঈদ সামগ্রী বিতরণ করে থাকি। ঈদের দিন মুঠোফোনে দূরের শুভাকাঙ্ক্ষীদের খোঁজ নেয়া এবং বিকেলে এলাকার মানুষের সাথে কুশল বিনিময় ইত্যাদি এসব করেই এখন ঈদ কেটে যায়।

ঈদ নিয়ে নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আল আমিন বলেন, ব্যক্তি এবং দলীয় সংকীর্ণতা ভুলে আমাদের লক্ষ্য হোক গরীব, অসহায় ও সুবিধা-বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। এবারের ঈদ সবার জন্য বয়ে নিয়ে আসুক অনাবিল আনন্দ।

বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া শৈশবের ঈদের স্মৃতিচারণ করে বলেন, এক মাস সিয়াম সাধনার পরে চলে এসেছে পবিত্র ঈদ। এবারের ঈদ আমার কাছে একটু ভিন্নরকম। পড়াশোনা কিংবা জীবন-জীবিকার তাগিদে পরিবারের অনেকেই বাইরে থাকেন। তবে ঈদের ছুটিতে বন্ধুবান্ধব পরিচিতজনেরা নিজ বাড়িতে ফিরেন। ঈদের ছুটিতে যেন সকলে মিলে একটা মিলনমেলায় পরিণত হয়।

তিনি বলেন, গ্রামগঞ্জে ঈদ উপলক্ষে কোথাও কোথাও মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। সেটিও বেশ উপভোগ্য। ঈদ আনন্দে যেন ধনী-গরীব কোথাও ভেদাভেদ না থাকে। ঈদ হোক মানবিক বিশ্ব গড়ার শপথ। সহমর্মিতা ও ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সকলের মাঝে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারসহ সকলকে পবিত্র ঈদ-উল-আযহার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।