চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারায় ৩২ বছর বেতন পান না অহিদুল
প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির চাহিদা অনুযায়ী অর্থ দিতে না পারায় এমপিও শিটে নাম ওঠেনি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার চম্পাতলী উচ্চবিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষক অহিদুল ইসলাম। প্রায় ৩২ বছর ধরে চাকরি করলেও বেতন পাননি তিনি। এ অবস্থায় আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন এই শিক্ষক।
জানা গেছে, ১৯৯২ সালের ২৪ জানুয়ারি চম্পাতলী উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগপত্র পান। সেদিনই যোগদান করেন তিনি। যোগদানের সময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এক লাখ টাকাও দেন অহিদুল। ২০০৪ সালে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্তির ২০ বছর হতে চললেও এমপিওভুক্ত হতে পারেননি অহিদুল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চম্পাতলী উচ্চবিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হওয়ার পর অহিদুলকে বাদ দিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুর রহমানের ভাই আতাউর রহমানকে নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্ত করা হয়। এরপর অহিদুলকে অফিস সহকারীর শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সহিদার আরও ৩০ হাজার টাকা নেন। তাতেও প্রতারিত হওয়ার পর ২০০৫ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন অহিদুল।
পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বেও একটি কমিটি করা হয়। উভয় কমিটি অহিদুল ইসলামকে এমপিও শিটে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য সুপারিশ করে। সেই সুপারিশের চার মাস পার হলেও গত শনিবার পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক সরকার অহিদুলের বেতন-ভাতার জন্য (এমপিও) কাগজপত্র উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে পাঠাননি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এমপিও শিটে নাম তুলতে প্রধান শিক্ষক যত টাকা দাবি করছেন, তা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, আমার সেই অর্থ নেই। তবু আমি ২০০৪ সালের আগে ১ লাখ ২০ হাজার এবং গত বছর ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। এরপরও আমার নাম এমপিও শিটে ওঠেনি।
প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ তিন মাস আগে শেষ হয়েছে, তাই কমিটি ছাড়া তাঁর কাগজপত্র অনলাইনে পাঠাতে পারছি না।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই শিক্ষকের কাগজপত্রে কোনো ত্রুটি নেই। এমপিওর জন্য ওই শিক্ষকের কাগজপত্র প্রধান শিক্ষককে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তাঁর কাগজপত্র পাঠাচ্ছেন না প্রধান শিক্ষক।’
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, ‘ওই শিক্ষকের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দ্রুত দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’