০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৪

ঢাবির ছাত্র থেকে কেএনএফ প্রধান, কে এই নাথান বম?

সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে তাণ্ডব চালিয়ে ফের আলোচনায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে ২ ব্যাংকে হামলার মাধ্যমে গোষ্ঠীটি নতুন করে উঠে আসে আলোচনায়। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটির পিছনে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা নাথান লনচেও বম নামের একজন। এই ব্যক্তি সশস্ত্র গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানা যায়।

র‌্যাব সদর দপ্তরের প্রতিবেদন এবং গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য থেকে জানা যায়, নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনাকালীন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে মতবিরোধের পর ওই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষে নাথান বম গঠন করেন কুকি-চিন জাতীয় ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও)। কয়েক বছর পর এ সংগঠনটি ভেঙে গড়ে তোলেন বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)।

বান্দরবানের রুমা উপজেলার ইডেনপাড়ার বাসিন্দা ও বম সম্প্রদায়ের সদস্য নাথান বম। তার বাবা মৃত জাওতন লনচে। পেশায় ছিলেন জুমচাষি। ৫ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে তিনি ছোট। ২০০৯ সালে বিয়ে করেন নাথান বম। তার স্ত্রী লেলসমকিম বম রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সের চাকরি করেন। বর্তমানে সন্তানকে নিয়ে তার স্ত্রী তাদের বাড়িতেই থাকেন। কিন্তু নাথান বম কোথায় আছেন তা জানতে পারেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষে নাথান বম গঠন করেন কুকি-চিন জাতীয় ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও)। কয়েক বছর পর এ সংগঠনটি ভেঙে গড়ে তোলেন বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। তাদের ফেসবুক পেইজে উল্লেখ করা হয়—অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত কুকিচিন জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা করা এই সংগঠনের উদ্দেশ্য।

নাথান বমের বাড়ি

সংগঠনটি প্রায় ১০০০ পুরুষ ও নারীকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়। একটি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে নাথান বম জাতীয় নির্বাচনে বান্দরবান আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়। নাথান ওই সময় দাবি করে বলেছে যে, বান্দরবানে রুমা এলাকায় বম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা ১১ হাজার ৬৩৭ জন।

বম তার সংগঠনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রশিক্ষণের ছবি যখন ফেসবুকে প্রকাশ করে তখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টনক নড়ে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে সে পালিয়ে যায়।

র‌্যাব জানায়, তারা জঙ্গি ধরতে বান্দরবানের রুমা এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় বমের একাধিক ক্যাম্পের সন্ধান পান তারা। সেখান থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়।

২০২২ সালে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার সীমান্ত এলাকা ভারতের মিজোরাম রাজ্যের পারভা থেকে কেএনএফের ছয়জনকে আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এরপরই আলোচনায় আসে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। আটকের পর আসামিদের থেকে একটি চিঠিতে কেএনএফের সামরিক শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সভাপতি ও চিফ অব স্টাফের সিলমোহরসহ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করে তারা। এছাড়াও স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের তথ্যও জানা যায়। একই বছর সশস্ত্র সরঞ্জামসহ কেএনএফের আরও চার সদস্যকে আটক করে বিএসএফ।

২০২২ সালে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার সীমান্ত এলাকা ভারতের মিজোরাম রাজ্যের পারভা থেকে কেএনএফের ছয়জনকে আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এরপরই আলোচনায় আসে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এমএন লারমা) গঠিত জনসংহতি সমিতি ভেঙে কয়েকটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছিল। কেএনএফ সেগুলোর মধ্য থেকে আসা একটি গ্রুপ।

গত মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাতে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। অপহরণ করে নিয়ে ব্যাংকের ম্যানেজারকে। তার পরদিনই একই জেলার থানচি উপজেলায় আরও দুটি ব্যাংকে ভরদুপুরে হামলা চালায় তারা। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে থানচি থানায় গুলি চালায় এই সন্ত্রাসীরা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, যে উপজাতি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে এই কুকি চিনের সংশ্লিষ্টতা, তাদের সংখ্যা বাংলাদেশে খুবই কম। তাদের বসবাস ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন। তবে বাংলাদেশে তাদের সংখ্যা কম হলেও ভারত-মিয়ানমার এমনকি চীনের অনেক স্থানে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভারতের মনিপুরসহ মিয়ানমারের অনেক স্থানে তারা সশস্ত্র তৎপরতা চালাচ্ছে। তবে মাঝে মাঝেই তারা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেয়।

তিনি আরও বলেন, এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীকে পরিচালনা করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। যেহেতু তাদের কাছে আধুনিক অস্ত্র রয়েছে, তাই সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত ব্যাংকগুলো সহজ টার্গেট হিসেবে সেখানে হামলা চালিয়ে তারা টাকা লুট করেছে।