ঈদের শপিংয়ে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন তিন বন্ধু
ঈদের কেনাকাটা করতে ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে বসে কুমিল্লার থেকে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন ১১ জন বন্ধু। ট্রেন চলাচলের সময় রেল ক্রসিংয়ে গেট না ফেলায় ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ গেল ৩ বন্ধুর। এ ঘটনায় নিহতদের গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঈদের আগে বিষাদের আঁধারে ডুবেছে গোটা গ্রাম।
শুক্রবার (০৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা- চট্টগ্রাম রেলপথের ফেনীর ফাজিলপুর রেলস্টেশন ও মুহুরিগঞ্জ রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে তিনজন হলেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের শাকতলা গ্রামের তিন বন্ধু।
তারা হলেন- ওই গ্রামের নুরুল হকের ছেলে দিল মোহাম্মদ (২৩), রুহুল আমিনের ছেলে মোহাম্ম রিপাত (১৭) ও মোহাম্মদ ইয়াসিনের ছেলে মো. সাজ্জাদ (১৮)।
শাকতলা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মালেক জানান, ১১ জন বন্ধু একসঙ্গে ঈদের বাজার করার জন্য চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় ৩ জন মারা যাওয়ার পর অন্য বন্ধুরা তাদের লাশ নিজ গ্রামে নিয়ে যায়। লাশগুলো গ্রামে পৌঁছার পর পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারগুলো শোকে হতবিহ্বল হয়ে যায়। বিকেলে তাদের লাশ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
চিওড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের বলেন, বন্ধুরা মিলে ঈদের শপিং করার উদ্দেশ্যে তারা চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন। পথে দুর্ঘটনায় তিন বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। বিকেলে শাকতলা আজিজিয়া মাদ্রাসার মাঠে জানাজা শেষে পাশাপাশি কবরে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এ দুর্ঘটনায় নিহত বাকি ৩ জনের মধ্যে দুজন হলেন বাবা-ছেলে। তারা হলেন - কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মনোহর পুর গ্রামের আমিন হোসেনের ছেলে আবুল খায়ের মিয়া (৪০) ও তার ছেলে আশিক (১৪)।
আশিক ও তার বাবা আবুল খায়ের ট্রেনের ইঞ্জিনে বসে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। এমন সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আবুল খায়ের ঘটনাস্থলেই মারা যান। আর গুরুতর আহত অবস্থায় আশিককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফেনী সদর উপজেলার পূর্ব ফাজিলপুর মুহুরীগঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ই/৩২(১) নম্বর রেলগেটে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গেটম্যান দায়িত্বরত অবস্থায় ছিলেন না। তখন চট্টগ্রামগামী মেইল ট্রেন অতিক্রম করার সময় গেট ব্যারিয়ার দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল। ওই সময় বালুবাহী ট্রাক রেললাইন পার হতে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ফেনী রেলস্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ হারুন জানান, দুর্ঘটনার পর ওই ট্রেনটি পুনরায় পেছনের দিকে ফাজিলপুর স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। সেটি বেলা সাড়ে ১১টার পর আবার চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় যায়।
ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি সকালে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন। এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।