০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৬

সারাহর কিডনি নেয়া সেই শামীমাকেও বাঁচানো গেল না

শামীমা আক্তার  © সংগৃহীত

সারাহ ইসলামের থেকে মরেণোত্তর কিডনি পেয়েও শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারলেন না শামীমা আক্তার (৩৪)। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আইসিইউতে মারা যান তিনি। 

এর আগে গত বছরের জানুয়ারি মাসে বিএসএমএমইউতে সারাহ ইসলামের অঙ্গদানের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট (ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপন) করা হয় দুইজন রোগীর শরীরে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত শামীমার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সারাহর কিডনি পাওয়া দুই নারীরই মৃত্যু হলো।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে হাসিনা নামে কিডনি পাওয়া প্রথম নারী মারা যান। যদিও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শামীমা আক্তার এবং হাসিনার শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপনের পর কার্যক্রমটিকে ‘সফল প্রতিস্থাপন’ বলে দাবি করেছিল।
 
বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রথমজন ফুসফুসের সংক্রমণে মারা গেছেন। এবার দ্বিতীয়জনও চলে গেলেন। এটি আমাদের জন্য খুবই কষ্টের।

শামীমা শেষ ছয় মাস আমাদের আওতার বাইরে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি শামীমার ভাই জানায়, ক্রিয়েটিনিন বেড়েছে, একেবারে শুকিয়ে গেছে শামীমা। পরে তিন সপ্তাহ আবারও বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয় তাকে। শুরুর দিকে কিছুটা উন্নতি হলেও কেন শুকিয়ে যাচ্ছিল সেটি ধরতে পারছিলেন না চিকিৎসকেরা। চার দিন আগে আইসিইউতে নেওয়া হয় তাকে।

মৃত্যুর কারণের বিষয়ে এই সার্জন বলেন, তার সি ভাইরাস ও বিরল নিউমোনিয়া ধরা পড়েছিল। সে অনুযায়ী ডায়ালাইসিসও শুরু করেছিলাম আমরা। কিন্তু উন্নতি হয়নি। বাইরের হাসপাতালেও একদিন নেওয়া হয়েছিল, অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় আবারও আমাদের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই আজ রাত ৯টার দিকে মারা যান তিনি।

প্রতিস্থাপনে নেতৃত্ব দেওয়া এই চিকিৎসক আরও বলেন, হেপাটাইটিস সি পজিটিভ হলে ব্লাড কাজ করে না। এজন্য বিশেষ করে রক্ত লাগে, সেটিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আর রেসপন্স করেনি। বাড়িতে থাকার সময়ে অবস্থা খারাপ হলেও সময় মতো আমাদের জানানো হয়নি। অনেকটা অবহেলা ছিল। খারাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। তাহলে হয়তো এই অবস্থা দেখতে হতো না।

শামীমার বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায়। গত বছরের ১৯ জানুয়ারি সারাহ ইসলাম নামে ২০ বছরের তরুণীকে ব্রেন ডেড ঘোষণা করেন বিএসএমএমইউ চিকিৎসকরা। ওই রাতেই তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় দুই নারীর শরীরে। ওই তরুণীর চোখের কর্নিয়া দেয়া হয় অন্য দুজনকে।

এদিকে দ্বিতীয় ক্যাডাভেরিকের মাধ্যমে যে দুজনের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ৭ বছর ধরে কিডনি সমস্যায় ভোগা এক ব্যক্তিকে এ বছরের ২৫ জানুয়ারি দেশের দ্বিতীয়বারের মতো ব্রেন ডেথ রোগীর দেয়া কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। রাজধানীর কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ওই প্রতিস্থাপন হয়। কিন্তু ১০ দিন না যেতেই ৪ ফেব্রুয়ারি মারা যান ৪৪ বছর বয়সী ওই রোগী।