‘অংশগ্রহণ-দক্ষতা ও নেতৃত্বের সমতার বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় নারীদের’
মানবাধিকার কর্মী ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেছেন, উন্নত দেশ গড়তে নারীর সমান অংশগ্রহণ, নারীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে জেন্ডার সমতা রক্ষার সময় এসেছে। শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীতে ‘উইমেন ইন লিডারশিপ সামিটে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় ‘উইমেন ইন লিডারশিপ’ প্রকল্পের অধীনে নাগরিক সমাজের সংগঠন ওয়েভ ফাউন্ডেশন এ সম্মেলনের আয়োজন করে। এছাড়াও এতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস উইমেন নেটওয়ার্ক (বিসিএসডব্লিউএন) ও ক্লোর সোশ্যাল লিডারশিপ ইউকে সহায়তা করেছে।
অনুষ্ঠানে আলোচকদের বক্তব্যে উঠে আসে—দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতে ভূমিকা রাখা উদীয়মান নারীদের অংশগ্রহণে, দক্ষতা ও নেতৃত্বের মাধ্যমে একটি সমতার বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আলোচকরা বলেন, নারীদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়। বরং নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা এবং সংশ্লিষ্ট সকল খাতেই নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (অ্যাকাডেমিক) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন। তিনি বলেন, দুর্যোগের কারণে নারীরাই বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়। তা সত্ত্বেও নারীরাই চ্যাম্পিয়ন। লোকায়ত শিক্ষার মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ‘নারীদের নেতৃত্ব দিতে হবে নিজ নিজ অবস্থানে’
আলোচনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা বলেন, ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে জেন্ডার সমতা ও নারী নেতৃত্ব নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের ভিশন ও মিশনের সমন্বয় ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাথে অংশীদারিত্বমূলক এই কর্মসূচিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকে নিয়ে গিয়েছে এবং এই কর্মসূচিকে সামনে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
নারীকে পিছিয়ে রাখা এবং দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে নেতৃত্ব বিকাশে সকলকে সংবেদনশীল আচরণ, কথা বলার চর্চা, সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। প্রকল্পের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে গিয়ে ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম ও শেরপুরের ঝাজর বিলনোতর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল মাওয়া উভয়েরই বক্তব্যে কর্মক্ষেত্রে, ব্যবহারিক জীবনে কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাঠামোগতভাবে কোর্সগুলোর গুরুত্ব উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী বলেন, পুরুষের তুলনায় নারীর সহনশীলতা তুলনামূলকভাবে বেশি, এটি আমরা পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে দেখতে পায়।
সমতা এবং ন্যায্যতার মাধ্যমে আমাদের ক্ষমতা প্রয়োগের দিকটি ভাবতে হবে। নারীর অধিকার প্রাপ্তি ও নেতৃত্ব বিকাশে সকলকে একযোগে কাজ করার জন্য জেন্ডার সংবেদনশীল হয়ে সর্বস্তরের অংশগ্রহণে আর্থ-সামাজিক, সুশাসন ও অধিকার নিশ্চিতে কাজ করে যেতে হবে বলেও জানান তিনি।
আলোচনায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার তামিম মোস্তফা তামিম মোস্তফা বলেন, আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সাথে বিভিন্ন ইস্যুতে যৌথভাবে কাজ করছি। লিঙ্গ সমতা যদি নিশ্চিত না হয়, তবে ২০৪১ সালের যে উন্নত রাষ্ট্রের ভিশন সেটা অর্জিত হবে না। সেজন্য নারী নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে যেতে হবে।
সঞ্চালনা করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমা। প্রকল্পের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আব্দুর রহমান খান এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়কারী খালেদা আক্তার। উদ্বোধনী অধিবেশনের পর ‘অংশগ্রহণ, দক্ষতা ও নেতৃত্বে গড়বো সমতার বিশ্ব’ এবং ‘নারীর অগ্রযাত্রায় বিনিয়োগ’ শীর্ষক দুটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও চাকরিতে এখনও পিছিয়ে নারীরা
প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সানজিদা আক্তার, জেন্ডার এন্ড সোশ্যাল ইনক্লুশন বিশেষজ্ঞ বাবেয়া রওশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা সেলের মহাপরিচালক সৈয়দা জেসমিন সুলতানা মিল্কি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক বেনজীর এলাহী মুন্নী, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও টেক্সট-বুক বোর্ডের সম্পাদক উর্মিলা খালেদ, গ্রামীণফোনের হেড অব সার্ভিস ডেলিভারি শায়লা রহমান, নারায়ণগঞ্জের উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার মৌরীন করিম, চাঁদপুরের জ্যেষ্ঠ উপজেলা ফিশারিজ অফিসার মনোয়ারা বেগম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসমিয়া হক মৌসুমী প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়। নারী নেতৃত্ব বিকাশ এবং নারীদের ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়াকে অগ্রসর করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয় ‘উইমেন ইন লিডারশিপ সামিট’। এবার দেশের বিভিন্ন স্থান ও প্রতিষ্ঠানের ৫০জন নারী অংশগ্রহণকারী এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। যাদের মধ্যে বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের ৩০ জন এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল অ্যালামনাই হতে ২০ জন যুব নারী পেশাজীবী ছিলেন। অনলাইন প্রশিক্ষণ, নেটওয়ার্কিংসহ ডিজিটাল ফেলোশিপের মাধ্যমে তাদের নেতৃত্বের ক্ষমতা এবং দক্ষতা বিকাশ, মেন্টরশিপ এবং সহযোগিতার সুযোগ, জেন্ডার সমতার ওপর আট সপ্তাহের একটি স্ব-মূল্যায়নভিত্তিক অনলাইন লিডারশিপ প্রশিক্ষণের সাথে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক আটটি মেন্টরিং সেশন এবং আটটি লাইভ ওয়েবিনার ছিল এ প্রোগ্রামের মূল কার্যক্রম।