১৪ মার্চ ২০২৪, ১০:৪৮

কত টাকা হলে মুক্তি পাবেন জাহাজে জিম্মি ২৩ বাংলাদেশি নাবিক

কত টাকা হলে মুক্তি পাবেন জাহাজে জিম্মি ২৩ বাংলাদেশি নাবিক  © সংগৃহীত

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ নামের জাহাজটি উদ্ধারে প্রাথমিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। জাহাজটির বিমাকারী যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে জাহাজের মালিকপক্ষ। জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ মনে করছে, টাকা ছাড়া নাবিকদের মুক্তি মিলবে না। তাই মুক্তিপণ দেওয়ার পথেই হাঁটছে তারা। তবে মুক্তিপণ কত?

মঙ্গলবার জাহাজটি সোমালিয়ার জলদস্যুরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর আতিক উল্লাহ তার স্ত্রীর কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তাতে বলেছেন, ‘এই মেসেজটা সবাইকে পাস করে দিও। আমাদের থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে আর কী। ফাইনাল কথা হচ্ছে যে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলছে।’

১৪ বছর আগে একই মালিকের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’ একইভাবে সোমালিয়ার জলদস্যুর কবলে পড়েছিল। সে সময়ও মুক্তিপণ দিয়ে ২৫ নাবিক-ক্রুকে ছাড়িয়ে এনেছিল কেএসআরএম। সেবার ১০০ কোটি টাকার বেশি মুক্তিপণ চেয়েছিল দস্যু দল। ঠিক কত টাকা মুক্তিপণ দিয়ে সে সময় বিষয়টির দফারফা করা হয়, তা গতকালও স্বীকার করেনি কর্তৃপক্ষ। এবারও তারা বলছে না মুক্তিপণের অঙ্ক।

এদিকে ২৩ জনের মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় অর্ধশত কোটি টাকার বেশি) দাবি করছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। তবে বিষয়টি সরকার বা জাহাজ মালিকপক্ষের কেউ স্বীকার করেনি।

জিম্মি নাবিকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য উদ্ধৃত করে স্বজন ও জাহাজের মালিকপক্ষ বলছে, জাহাজটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অন্তত ৫০ জন অস্ত্রধারী জলদস্যু। গতিপথ ঘুরিয়ে সেটিকে সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে জলদস্যুরা।

আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজের ২৩ নাবিক এখন জলদস্যুদের হাতে জিম্মি। মুক্তিপণ না দিলে জলদস্যুরা তাদের একে একে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বলেও স্বজনদের জানিয়েছেন নাবিকরা। 

বুধবার (১৩ মার্চ) ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হাইজ্যাক হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিককে উদ্ধারে সোমালীয় জলদস্যুদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করা যায়নি। তবে নাবিকদের উদ্ধার তৎপরতা চলছে। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সেকেন্ড পার্টির মাধ্যমে চেষ্টা করছি এবং যেখানে জানানো প্রয়োজন, আমরা সেখানে জানিয়েছি।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে রিপোর্টিং সেন্টার ইন কুয়ালালামপুর, ইন্ডিয়ান ফিউশন সেন্টার ইন নিউ দিল্লি, তারপর সিঙ্গাপুর, ইউএসএ, ইউকে, চায়নাসহ সব এরিয়াল নেভাল শিপে আমরা রিপোর্ট করেছি। অন্যান্য সূত্রের মাধ্যমেও আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।’

গতকাল সন্ধ্যায় জাহাজটির সর্বশেষ অবস্থান ছিল সোমালিয়া উপকূল থেকে ১৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে। এটি ক্রমে উপকূলের দিকে যাচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টার মধ্যে জাহাজটি উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবে। সেখানে পৌঁছার পর জলদস্যুরা মুক্তিপণের ব্যাপারে যোগাযোগ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, ভেসেল ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট থেকে এমভি আবদুল্লাহর এ অবস্থান তারা জানতে পেরেছেন। 

জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান এক অডিও বার্তায় জানিয়েছেন, জাহাজে ২০ থেকে ২৫ দিনের খাবার পানি আছে। খাবার আছে ২০০ টনের মতো। পানি-খাবার শেষ হলে বিপদে পড়ার শঙ্কা রয়েছে সবার। মঙ্গলবার পাঠানো এই অডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘সবাইকে বলেছি সবকিছু একটু সাবধানে ব্যবহার করতে। শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়ব আমরা।’ 

নাবিকদের খাবার সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহাজের মালিকপক্ষ জানায়, জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ায় এখন রেশনিং করে চলতে হবে। ২০০ টন পানি দিয়ে সাধারণত এক মাস চলা যায়। রেশনিং করলে আরও বেশি দিন যাবে। একইভাবে ২৫ দিনের খাবার রেশনিং করে আরও কিছুদিন চালিয়ে নেওয়া যাবে। এর মধ্যে সুরাহা না হলে তারা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনে খাবার ও পানীয় পাঠাবে জাহাজে।