১২ মার্চ ২০২৪, ১১:১১

এমপির বাসায় নেতাকে নির্যাতন, বিচার দাবি ছাত্রলীগের

বিএম আনিছুজ্জামান  © ফাইল ছবি

ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) সংসদীয় আসনের এমপি এবিএম আনিছুজ্জামানের বাসায় ছাত্রলীগের এক কর্মীকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ত্রিশাল পৌরসভার উপ-নির্বাচনে এমপির স্ত্রী মেয়র পদে পরাজিত হওয়ায় ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে রবিবার এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। তবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এমপি এবিএম আনিছুজ্জামান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে , নির্যাতনের শিকার ওই নেতার নাম ফয়সাল আহমেদ। তিনি ত্রিশাল সরকারি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী ও মানবিক বিভাগ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি ত্রিশাল ইউনিয়নের চকপাঁচপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুর রহিমের ছেলে।

ফয়সালকে নির্যাতনের পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পরে পুলিশ হেফাজতে দেওয়ার খবর পেয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে পুলিশ স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতির জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনায় সোমবার (১০ মার্চ) ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে বিচার চেয়েছে ছাত্রলীগ।

জানা যায়, ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র থেকে পদত্যাগ করে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি হন এবিএম আনিছুজ্জামান। স্ত্রী শামীমা আক্তারকে পৌরসভার উপ নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী করেন। স্ত্রীকে জেতাতে ভোটের মাঠে প্রচারে নেমেও আলোচনার সৃষ্টির করেন এমপি। কিন্তু ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত ভোটে বিএনপির নেতার কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন এমপি পত্নি শামীমা।

এমপি পত্নির পরাজয় নিয়ে শনিবার রাতে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফয়সাল আহমেদ। নিজের স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছিলেন ‘পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের মেয়র (পৌর মাতা) নয় সন্তানের মায়ের কি হলো’। অবশ্য পরে সেটি ফেসবুক থেকে ডিলিট করে দেন তিনি। 

নির্যাতিত ফয়সাল আহমেদ বলেন, উপজেলা পরিষদের সামনে তার এক বন্ধু ডেকে নিয়ে এমপির বাসায় তিনতলায় নিয়ে রাব্বি, আবদুল্লাহ, অপরিচিত একজন ও এমপি আনিছের ছোট ছেলে সাদমান সামিন আমাকে হকিস্টিক, লোহার পাইপ, লাঠি ও চেলাকাঠ দিয়ে মারধর চলতে থাকে। বেলা ১২টার দিকে ধরে নেওয়ার পর মারধর শুরু করে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকে। পরের দফায় এমপির বড় ছেলে তার লোকজন নিয়ে আরেক দফা মারধর করে।

তিনি বলেন, এক পর্যায়ে পলিথিনে মুড়ানো ককটেল সামনে দিয়ে বলা হয়- 'তোকে যা বলব তাই করবি নয়তো তোর আঙুল ভেঙে দিব।' এ সময় সাবেক এমপির ছেলে হাসান আমাকে ককটেল দিয়ে এমপিকে মারার জন্য পাঠিয়েছে বলে মোবাইলে স্বীকারোক্তি রাখে। এরপর এমপির কাছে নিয়ে গেলে আমি ক্ষমা চাইলেও তিনি শুনেননি। আমাকে বিভিন্ন মামলায় জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমার হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দেন। পরে পুলিশ ডেকে থানায় দিয়ে দেয়। 

ফেসবুক স্ট্যাটাসকে ঘিরে ফয়সালকে তুলে নিয়ে এমপির বাসায় আটকে মারধর ও পুলিশ হেফাজতে দেওয়ার খবর পেয়ে রোববার রাত ৯টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভকালে এমপি আনিছের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।

রাত সোয়া ১০টার দিকে লাটিসোটা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে থানার গেইটের সামনে গেলে এমপির লোকজন বিপরীত দিক থেকে লাঠি নিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়।

ত্রিশালের সংসদ সদস্য এবিএম আনিছুজ্জামান বলেন, ছেলেটিকে কোনো মারধর করা হয়নি। সে গত সংসদ নির্বাচন থেকে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। সে এখন লিখেছে আমার স্ত্রী সম্পর্কে বিভিন্ন অশ্লীল কথাবার্তা। সে যখন এগুলো লিখেছিল তখন পেছন থেকে এক ছেলে দেখে তাকে ধরে আমার কাছে নিয়ে আসে। পরে আমি ওসিকে ফোন দিয়ে থানায় দিয়ে দেই।

ত্রিশাল থানা পুলিশের ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, এমপির ফোন পেয়ে বাসা থেকে ফয়সালকে আনা হয়। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঘটনা। ফয়সালের শরীর জুড়ে মারধরের আঘাত ছিল। তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।