সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে অনিয়ম রুখতে নবাগত ডিডির জিরো টলারেন্স
ফেরদৌসি ইসলাম মিষ্টি। ১৩ নং লাবসা ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি এই ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বার। তার দুই ছেলের কিডনি নষ্ট। ছেলেদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবেন ভারতে। সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে এসেছিলেন পাসপোর্ট করতে। পুরাতন পাসপোর্টের সাতে বর্তমান ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কিছুটা ভুল থাকার কারণে গত দুই মাস বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে যখন দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি।
উপায়ন্তর না পেয়ে সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের বর্তমান উপ-পরিচালক মো. মেহেদী হাসান কাছে যান তিনি। এক সপ্তাহের মধ্যে তার পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দেন উপ-পরিচালক। ফেরদৌসি ইসলাম উপ-পরিচালক মহোদয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি তার কাছে চির কৃতজ্ঞ। তার কারণে আমার ছেলে দুটিকে নিয়ে এবার ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারবো।
সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিস থেকে সরকার এক বছরে (২০২৩) রাজস্ব আদায় করেছে ৮ কোটি ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এখানে প্রতিদিন প্রায় ২০০থেকে ২৫০টি আবেদন জমা পড়ে। প্রতিদিন একই পরিমাণ পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া হয়।
সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের উপ- পরিচালক মো. মেহেদী হাসান বলেন, আমি সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি যোগদান করি। সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের প্রধান সমস্যা লোকবল সংকট। এখানে ২২ জন কর্মকর্তা কর্মচারির স্থলে মাত্র ১০ জন দিয়ে কাজ করতে হয়। একজন কর্মকর্তাকে দুই তিনজনের কাজ করতে হয়। তারপরও আমরা সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যাচ্ছি। যাতে কেউ পাসপোর্ট করতে এসে ভোগান্তির শিকার না হয়। আমরা অর্ধেকের কম লোকবল নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমি একটি বিশেষ স্বপ্ন নিয়ে সাতক্ষীরায় এসেছি। সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের একটু আমূল পরিবর্তন আনতে চাই। গত এক মাসে আমি সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য পাসপোর্ট অফিসে গুণগত কিছু পরিবর্তন এনেছি। দালালমুক্ত ও কোন কর্মকর্তা কর্মচারী যাতে অনৈতিক সুবিধা না নিতে পারে সেজন্য পুরো পাসপোর্ট অফিস সিসি ক্যামেরা দিয়ে বেষ্টিত। সপ্তাহে সোমবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা গণশুনানির ব্যবস্থাও রয়েছে।
এছাড়া আবেদন কারিদের ভোগান্তি কমাতে ই –কিউ (ইলেকট্রনিক কিউ) টোকেন স্লিপ দেওয়া হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ও অসুস্থদের জন্যও আলাদা কাউন্টারের মাধ্যমে বিশেষ সেবা দেওয়া হয়। প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইল চেয়ারের মাধ্যমে সেবা প্রদানের ব্যবস্থাও রয়েছে। হেল্প ডেস্ক, জবাবদিহি বক্স ও যে কর্মকর্তা কর্মচারী আবেদনকারীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারবে তার জন্য রাখা হয়েছে মাসিক পুরস্কারের ব্যবস্থা। এছাড়া রয়েছে অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কলিংবেলের মাধ্যমে সেবা দেওয়া। নীচ থেকে কলিংবেল চাপতেই সরাসরি ডিডি নিজে এসেই সেবা দিয়ে যান।
কথা হয় সাতক্ষীরা মুনজিতপুর এলাকার আমিনুর রহমান আলমের সাথে, তিনি বলেন, আমার নানা নানি অসুস্থ। তাদেরকে নিয়ে আমি পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলাম। প্রচণ্ড ভিড় থাকায় আমি সাহস করে ডিডি সাহেবের রুমে গিয়েছিলাম। তিনি যাওয়ার সাথে সাথে আমার কথা শুনে দ্রুত আমার ফাইলে সই করে দিয়ে বললেন নিচে গিয়ে ছবি তুলে চলে যান দ্রুত পাসপোর্ট পাবেন।
উপ-পরিচালক মো. মেহেদী হাসান জানান, সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে আমি এক মাস হলো যোগদান করেছি। পাসপোর্ট অফিসে জিরো টলারেন্স দেখাতে চাই। কোন সেবা প্রত্যাশী যাতে হয়রানির শিকার না হয় বা দালালের খপ্পরে না পড়ে তার সর্বোচ্চ খেয়াল রাখা। পাসপোর্ট অফিসকে আমি সর্বোচ্চ সেবার মানদণ্ডে নিয়ে যেতে চাই। যে কোন সেবা প্রত্যাশী যখন তখন আমার রুমে এসে সেবা নিতে পারবে।
তিনি দালালদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমি যতদিন থাকবো দালালমুক্ত সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিস উপহার দিবে। সেজন্য তিনি সাতক্ষীরাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।