প্রাথমিকেই শিক্ষার আলো নিভে যায় চর কচুয়াখালীর অধিকাংশ শিশুর
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। একটি জাতিকে উন্নত হতে হলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন সুশিক্ষা গ্রহণ। তবে দ্বীপ জেলা ভোলার লালমোহন উপজেলার বিচ্ছিন্ন চর কচুয়াখালীর শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে সুশিক্ষাগ্রহণ থেকে। এ চরের শিশুদের শিক্ষার জন্য কেবল একটি সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। নেই মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
যার ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডির বেশি আর পার হতে পারে না চর কচুয়াখালীর শিশুরা। তবে কিছু শিক্ষার্থীর অদম্য ইচ্ছা শক্তিতে তারা দূরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ালেখা করে। তবে ওইসব শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই স্বল্প।
বিচ্ছিন্ন চর কচুয়াখালীর শহিদ আওলাদ হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জয়নুল আবেদিন বলেন, ২০১৮ সালে চরে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে বিদ্যালয়টিতে ২০১৯ সালের প্রথম দিক থেকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে নিয়মিতভাবে চলছে বিদ্যালয়টি। প্রতি বছরই এ বিদ্যালয় থেকে গড়ে ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণি সমাপ্ত করছে। বিদ্যালয়টিতে পাঁচ জন শিক্ষকের কোটা থাকলেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৩ জন। অনেক সমস্যা হওয়া সত্ত্বে ও আমরা চরের শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, চর কচুয়াখালীর কোমলমতি শিশুরা এই বিদ্যালয়ে এসে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর আর মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে চরের অসহায়-হতদরিদ্র পরিবারের অধিকাংশ শিশুরাই প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ঝরে পড়ছে। তবে মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষার্থী এখান থেকে প্রাথমিক শেষ করে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাগ্রহণের জন্য পার্শ্ববর্তী দশমিনা উপজেলার চরহাদিতে যাচ্ছে। যা এ চর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এতে করে ওই বিদ্যালয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত ব্যাপক কষ্ট ও সংগ্রাম করতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ঝরা পড়া রোধ দূর করতে চর কচুয়াখালীতেই মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা খুবই দরকার। তাহলে এখানকার সকল শিশুরা মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ পাবে।
চর কচুয়াখালী থেকে চরহাদীতে যাওয়া সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সজিব, মো. জিহাদ ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রিমা এবং শিরিনা আকতার জানায়, আমরা শহিদ আওলাদ হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। আমাদের পড়ালেখার খুবই ইচ্ছা। যার জন্য এ চরে মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় অনেক কষ্ট করে বর্তমানে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের চরহাদীর জনকল্যাণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ছি। গ্রীষ্মের সময় একটু ভালোভাবে বিদ্যালয়ে যেতে পারলেও বর্ষার সময় আমাদের কষ্টের শেষ থাকে না। তাই অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে হলেও চর কচুয়াখালীতেই মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি বিদ্যালয় নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
মো. খোকন বেপারী, আজিজল ইসলাম, জায়েদা খাতুন ও বিবি আয়েশা নামে চর কচুয়াখালীর কয়েকজন অভিভাবক বলেন, বছরের পর বছর আমরা এই চরে বসবাস করছি। প্রথম দিকে এখানে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। তবে গত কয়েক বছর আগে এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়। ওই বিদ্যালয়ে আমাদের সন্তানরা কেবল পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। তবে চর কচুয়াখালীতে মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় অধিকাংশ শিশুরা প্রাথমিকের পরে আর পড়ালেখা করতে পারছে না। যার জন্য অনেকেই শিশুশ্রমে সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।
তারা আরও বলেন, তবে যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা মূল ভূখণ্ডের বিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠিয়ে পড়ালেখা করাচ্ছেন। সে সংখ্যাও অনেক কম। এছাড়া অনেকে আবার পার্শ্ববর্তী দশমিনা উপজেলার চরহাদীর একটি বিদ্যালয়ে গিয়ে মাধ্যমিকে পড়ছে। আমাদের শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই চরে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা দাখিল মাদরাসা স্থাপনের জোর দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, চরে কেবল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই রয়েছে। ওই চরে মাধ্যমিক স্তরের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি। চর কচুয়াখালীতে মাধ্যমিক স্তরের একটি বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখবো।