শরীফ-শরীফা গল্পের লেখকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ
নতুন শিক্ষাক্রমে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ৩৯ ও ৪০ পৃষ্ঠায় থাকা শরীফ-শরীফা গল্পের লেখকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে কাকরাইলে অবস্থিত ‘বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামে একটি সংগঠনের অফিসের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। আয়োজকরা জানিয়েছেন, এ সংগঠনটি আলোচিত শরীফ-শরীফা গল্পের লেখক ছিল।
শরীফ-শরীফা গল্প নিয়ে কথা বলে চাকরিচ্যুত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফি বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব এ কর্মসূচি আহ্বান করেছেন। এতে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
আসিফ মাহতাব বলেন, ‘‘শরীফ-শরীফা গল্প কে লিখেছে, কারা এ গল্পের লেখক? নিজের হাত হাতে ‘বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির’ অফিস দেখিয়ে তিনি বলেন, তারা এ গল্পের লেখক। এটা তাদের অফিস। এখানে বসে তারা আইনবিরোধী সব অপকর্ম করেছে।’’
ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে সংগঠনটির কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা এমন একটা নিকৃষ্ট বিল পাস করার চেষ্টা করেছিল—যে আইনে বলা হবে... ‘আপনার ছেলে ছেলে হয়ে যদি বলে বাবা আমি মেয়ে’, আর আপনি যদি তার কথার প্রতিবাদ করেন তাহলে তাদের ওই ড্রাফট বিলে আপনার এক বছরের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হবে।
তিনি বলেন, তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে, নতুন পাঠ্যক্রমে ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ তারা যুক্ত করেছে। তারা জেনে-বুঝে এ কাজ করেছে। তারা বলে জেন্ডার নাকি মনস্তাত্ত্বিক। মনে মনে চিন্তা করলেই হয়ে যায়। এটা সত্য না। আসল সত্যকে এখানে ঢাকা দেওয়া হয়েছে। আমাদের মাধ্যমে এ সত্যকে ঢাকা দেওয়া হয়েছে। যেটা করা হয়েছে আমাদের ধোঁকা দেওয়ার মাধ্যমে।
আবার তিনি নিজের হাতে ‘বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির’ অফিস দেখিয়ে তিনি বলেন, তারা আমাদের ধোঁকা দিয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ধোঁকা দিয়েছে, জনগণকে ধোঁকা দিয়েছে, অভিভাবকদের ধোঁকা দিয়েছে, আলেমদেরও ধোঁকা দিয়েছে। তাদের এসব ধোঁকাবাজি আইনগতভাবে ১০৭, ১০৮, ১১৬ ধারায় সম্পূর্ণ অবৈধ।
‘‘এরা আমাদের মেয়েদের কাছে বন্ধু নামে এসে বলে তুমি মনে মনে ছেলে, তোমার ভেতর ছেলেদের স্বভাব আছে। তার মানে তুমি ছেলে। তুমি এ পথে আসো, তোমার মঙ্গল হবে, তুমি সব পাবে। তারপর আমাদের সন্তানরা ওই পথে পা দিয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। গবেষণা বলে, এই পথে গেলে মানুষ দুশ্চিন্তায় ভোগে। আত্মহত্যা করে। তারা এ ধোঁকাবাজদের কথা শুনে দুনিয়া-আখেরাত ত্যাগ করে দিচ্ছে।’’
আসিফ মাহতাব অনেকটা অনুতাপ করে বলেন, এরপরও দেশের মানুষ সচেতন হচ্ছে না। বাংলাদেশের মসজিদে কোনো মুসলমান নেই! মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থী নেই! অভিভাবক নেই! থাকলে এরা এখনো কীভাবে প্রকাশ্যে দেশের মাটিতে কাজ করে যাচ্ছে? এদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলছে না, প্রতিবাদও করছে না।
‘বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির’ প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে আসিফ বলেন, আপনারা যদি কথা বলতে আসতে চান, আসেন। সমকামিতার সাথে ট্রান্সজেন্ডার সম্পর্ক আছে কিনা। আমরা এখানে আছি, আপনারা নিচে নেমে আসুন। আমাদের সাথে কথা বলুন। কী বোঝাতে চান, হিজড়া-ট্রান্সজেন্ডার এক? আসেন, প্রমাণ করে দেব। কোনোদিনও তাদের আমাদের সাথে কথা বলার সাহস হবে না।
এর আগে, গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব।
তখন তিনি অভিযোগ করেন, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি ওই বইয়ের ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায়ে ‘শরীফার গল্প’ অংশের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেন। বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলা এবং ওই দিনের অনুষ্ঠানের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এরপর এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এরই মধ্যে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে আসিফ মাহতাব জানান, এ ঘটনার পর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। শুরুতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকলেও ২৯ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি জানায়, আসিফ মাহতাব ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বর্তমানে তার সঙ্গে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কোনো চুক্তি নেই।