তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে দেশে প্রথমবারের মতো ‘লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড’
বাংলাসহ অন্যান্য মাতৃভাষা চর্চার প্রতি তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে ‘লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড’ এর আয়োজন করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে অলিম্পিয়াডের দেশের ৫টি অঞ্চলের ৬টি ভেন্যুর বিজয়ীরা চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেবেন।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে এসব তথ্য জানানো হয়। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ এর অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে এই আয়োজন করছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট।
এসময় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানমালার বিস্তারিত সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার সূচির মধ্যে রয়েছে- মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডের চূড়ান্ত পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। পরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে; ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় (সম্ভাব্য) প্রধানমন্ত্রী চারদিন ব্যাপী ২১শের অনুষ্ঠানমালার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন; ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ভাষা মেলা অনুষ্ঠিত হবে; ২২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সেমিনার এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে; ২৪ ফেব্রুয়ারি শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রেস কনফারেন্সের সভাপতিত্ব করেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ। এসময় তিনি অলিম্পিয়াডের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। প্রেস কনফারেন্সে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ভাষা বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভাষা, গবেষণা ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম পরিচালক ও প্রশাসন, অর্থ ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক মো. আজহারুল আমিন।
এসময় অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যেই বেশকিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সমগ্র দেশে লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাংলাসহ অন্যান্য মাতৃভাষা চর্চার প্রতি নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিপন্ন ভাষা পুনরুদ্ধার, বিকাশ ও নথিবদ্ধকরণের কাজে এ প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত আছে। জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মাতৃভাষা চর্চার প্রতি গুরুত্ব অনস্বীকার্য বলে মনে করি।
তিনি বলেন, এই প্রতিযোগিতায় ভাষা কত তাড়াতাড়ি শেখা যায় তার একটা অনুশীলন হয়েছে। আমার চেষ্টা করবো প্রতি বছর নতুন নতুন ভাষা নিয়ে প্রতিযোগিতার বিষয় হিসেবে রাখার। নানা কারণে এবার প্রতিযোগিতা বাজেট সংকট ছিল। আমার যদি বাজেট সংকুল করতে পারি তাহলে চেষ্টা করবো ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ভাষা প্রতিযোগিতাতে পাঠানোর। তারা বাহিরের দেশে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড সারাদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। দেশে সংগঠিত প্রথম এ আয়োজন চূড়ান্তপর্বে আরও উৎসবমুখর হবে বলে আশা করি। ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এ লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারীরা মাতৃভাষা চর্চা ও অনুশীলনে আরও সচেতন হবে বলে আমার বিশ্বাস।
আয়োজকরা জানিয়েছে, এর আগে দেশের ৫টি অঞ্চলের ৬টি ভেন্যুতে দুটি ক্যাটাগরিতে এ প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘ক’ ক্যাটাগরিতে অংশ নেয় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। ‘খ’ ক্যাটাগরিতে অংশ নেয় দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির (এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ) শিক্ষার্থীরা।
এদিকে মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে প্রতিযোগিতার চূড়ান্তপর্ব। ফাইনাল এই রাউন্ডে ‘ক’ ক্যাটাগরি থেকে ১০ জন করে মোট ৬০ জন এবং ‘খ’ ক্যাটাগরি থেকে ১০ জন করে মোট ৬০ জন অংশ নেবেন। পরে এই ২ ক্যাটেগরিতে তিনজন করে মোট ৬ জন বিজয়ী প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে একুশের অনুষ্ঠানমালায় পুরস্কার গ্রহণ করবেন। একইসঙ্গে এসব প্রতিযোগিরা এ বছর ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াডের জন্য বিবেচিত হবেন।