পবিত্র শবে মেরাজ আজ, জেনে নিন ফজিলত
আজ হিজরি রজব মাসের ২৬ তারিখ, বৃহস্পতিবার দিনগত রাত পবিত্র শবে মেরাজ। ফারসি শব শব্দের অর্থ রাত ও আরবি মেরাজ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বারোহণ বা ঊর্ধ্বগমন। মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী, ২৬ রজব দিবাগত রাতে ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ করে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.) আল্লাহ তা’য়ালার সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন।
ইসলাম ধর্মে শবে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এই মেরাজের মধ্য দিয়েই সালাত বা নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয় এবং এ রাতেই প্রতিদিন ৫ বার নামাজ আদায় করার বিধান নিয়ে আসেন প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জীবনের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা মেরাজ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছাড়া অন্য কোনো নবী এই পরম সৌভাগ্য লাভ করতে পারেননি। আর এ কারণেই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান হলো আমার (নবীজির) মাস; রমজান হলো আমার উম্মতের মাস।’ (তিরমিজি)। ‘যে ব্যক্তি রজব মাসে (ইবাদত দ্বারা) খেত চাষ দিল না এবং শাবান মাসে (ইবাদতের মাধ্যমে) খেত আগাছামুক্ত করল না; সে রমজান মাসে (ইবাদতের) ফসল তুলতে পারবে না।’ (বায়হাকি)।
শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ কোনো আমলের কথা শরীয়তে উল্লেখ করা হয়নি। তারপরও এ রাতে ধর্মপ্রাণ মানুষ বিশেষ ইবাদত বন্দেগিতে লিপ্ত থাকতে পছন্দ করেন। বিশেষত এ রাতকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মসজিদে কিংবা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করার প্রথা বহুদিন যাবত্ চলে আসছে। অনেকে এ উপলক্ষে নফল রোজা রাখেন। তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করেন।
শবে মেরাজের রাতের ফজিলত ও আমল | বিক্রমপুর খবর
তবে অন্যান্য দিনের মতো এ রাতেও নফল ইবাদত করতে কোনো বাধা নেই। তাছাড়া রজব মাস আমলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই মাস থেকে মহানবী (স.) রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতেন। উম্মে সালমা (রা.) বলেন, নবী করিম (স.) রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করতেন শাবান মাসে, অতঃপর রজব মাসে। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘যখন রজব মাস আসত, তা আমরা নবীজি (স.)-এর আমলের আধিক্য দেখে বুঝতে পারতাম।’ নফল নামাজ-রোজা যেকোনো রাতে করতে নিষেধ নেই, বরং উৎসাহিত করা হয়েছে। তাই এ রাতের নির্দিষ্ট কোনো আমলের কথা না বলা হলেও কেউ আল্লাহপ্রেমে রাতের নামাজ-তেলাওয়াতে মশগুল হলে অসংখ্য সওয়াবের অধিকারী হবেন ইনশাল্লাহ।
শবে মেরাজের নামাজ পড়ার নিয়ম
দুই রাকাতের নিয়তে কমপক্ষে ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হয়। তাছাড় ও আপনি বিভিন্ন নফল ইবাদাতসহ আর বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন এশার নামাজ আদায় করারা সময় তিন রাকাত বিতির নামাজ আদায় করা যাবে না। এই তিন রাকাত নামাজ আদায় করবেন সকল নফল নামাজের পর। শবে মেরাজের নিয়ত অন্যান্য নফল নামাজের মতই এই নামাজের নিয়ত করবেন।
নামাজের নিয়ত এর উচ্চারণ
নাওয়াইতুআন উছাল্লিয়া লিল্লাহে তাআলা রাকআতায় ছালাতি লাইলাতিল মেরাজ মুতাওইয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
মেরাজের রাতে নফল ইবাদত করো ও দিনে রোজা পালন করো। এ ছাড়া প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিজ-এর নফল রোজা তো রয়েছেই। রজব মাসের বিশেষ আমল হলো বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। বিশেষত প্রতি সোমবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং মাসের ১, ১০; ১৩, ১৪, ১৫; ২০, ২৯, ৩০ তারিখ রোজা রাখা। অধিক হারে নফল নামাজ পড়া। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত-দোহা, জাওয়াল, আউয়াবিন; তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলুল মাসজিদ ইত্যাদি আদায় করা।