মিয়ানমার বাহিনীর প্রবেশে নতুন শঙ্কায় বাংলাদেশ, অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় ৪০০ চাকমা
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ব্যাপক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পালিয়ে আসা আরও ১১৪ জন সেনা সদস্যসহ এখন পর্যন্ত ২২৯ জন বিজিপি সদস্য প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে।
অন্যদিকে ত্রিমুখী সংঘর্ষের মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে দেশটির চাকমা সম্প্রদায়ের প্রায় ৪০০ জন। একই সঙ্গে হাজারও রোহিঙ্গা পরিবার।
এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘বিভিন্ন মারফতে জানতে পেরেছি বেতবুনিয়ার সীমান্তের কাছে প্রায় ৪০০ জন চাকমা সীমান্ত অতিক্রম করে ঘুমধুম প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে সেখানে বিজিবি টহল জোরদার করেছে।’
এদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তিন সন্তানসহ পাঁচ সদস্যেরর এক রোহিঙ্গা পরিবার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করলে তাদেরকে আটক করে বিজিবি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাড়ির উঠানে পড়া মর্টার শেল
অন্যদিকে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ঘুমধুম ইউনিয়নে মধ্যমপাড়ায় মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের আঘাতে এক বাংলাদেশিসহ দুজন নিহত হয়েছেন। একই এলাকায় মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ছোড়া আরেকটি মর্টার শেল এসে পড়েছে ওই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাড়ির উঠানে।
অনুপ্রবেশের বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, মিয়ানমারে অভ্যন্তরে অনেক রোহিঙ্গা ও চাকমা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষা করছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। তবে আমরা এমনিতেই পুরাতন রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংকটে রয়েছি। তাই নতুন করে অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে দেশটির সরকারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির সংঘর্ষ চলছে। এতে মিয়ানমার সীমান্তে বসবাসকারীদের মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় তারা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন। সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমার থেকে কোনো রোহিঙ্গা অথবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।
পালিয়ে আসা সেনাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর
একই বিষয়ে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার ভোর থেকে তারা বাংলাদেশ-মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্ত অতিক্রম করে কক্সবাজারে ও বান্দরবান অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে বিজিবির কঠোর অবস্থানের কারণে এখনও পর্যন্ত কেউ অনুপ্রবেশ করতে পারেনি।
স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ও উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি। এ চৌকির দখলকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ) ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) মধ্যে রোববার রাত ১১টা থেকে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে চলেছে। রাতের অন্ধকারে হেলিকপ্টার থেকে গোলা ফেলা হয়, মর্টার শেল নিক্ষেপ করা হয়। এভাবে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত চলে। সংঘর্ষের গোলাবারুদ এসে পড়ছে বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, গতরাত নির্ঘুম রাত পার করেছে মানুষ। মর্টার শেলে দুজন নিহত হওয়ার পর আতঙ্ক দ্বিগুণ বেড়েছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অপ্রয়োজনে কাউকে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করছে সরকার
এদিকে মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী ও বিজিবিকে (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ওই ঘটনাটি বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় চলমান অস্থিরতার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করা হয়েছে। পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।