পর্দা উঠল ৩৬তম জাতীয় কবিতা উৎসবের
‘যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা’ এ মর্মবাণী সামনে রেখে জাতীয় কবিতা পরিষদের আয়োজনে শুরু হয়েছে ৩৬তম জাতীয় কবিতা উৎসব। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সংলগ্ন হাকিম চত্বরে দু'দিনব্যাপী এই উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।
কবি নির্মলেন্দু গুণ এক ভিডিও বার্তায় উৎসবের উদ্বোধন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি ও ঢাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত ও জাতীয় কবিতা উৎসব ২০২৪-এর আহ্বায়ক শিহাব সরকার।
উদ্বোধকের বক্তব্যে নির্মলেন্দু গুণ বলেন, আমাদের অগ্রজ কবিরা যারা এতদিন আমাদের মাথার ওপরে ছিলেন, তারা ক্রমেই হারিয়ে গেছেন। বয়সের হিসেবে বাংলাদেশের জীবিত কবিদের মধ্যে আমার স্থান হলো দ্বিতীয়। আর আমার কবিবন্ধু মহাদেব সাহা তিনি আমার চেয়ে এক বছরের বড়। আমার মাথার ওপরে তিনি আছেন। সুস্থ থাকলে হয়ত উদ্বোধন তিনি করতেন।
তিনি আরও বলেন, এরশাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে জনমত সৃষ্টি করার জন্য ১৯৮৭ সালে কবিতা পরিষদ গঠিত হয়েছিল। যাতে আমাদের কবিরা এরশাদের দলভুক্ত না হন, তাদেরকে নিবৃত্ত করার জন্য। তখন এরশাদ সাহেব নিজেই কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন। তার কবিতা দেদারসে ছাপা হতে শুরু করে এবং আমাদের দেশের বেশকিছু কবিও বঙ্গভবনে আয়োজিত কবিতা পাঠের আসরগুলোতে ভিড় জমাতে শুরু করেন। এটা আমাদের জন্য একটি অশনিসংকেত ছিল। ফলে আরেকটা নতুন প্ল্যাটফর্ম এরশাদের বিরুদ্ধে তৈরি করার জন্য জাতীয় কবিতা পরিষদের জন্ম হয়।
অনুষ্ঠানে কবিতা পরিষদের সভাপতি ড.মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বিশ্বব্যাপী আজ নারী, শিশু, দরিদ্র শ্রেণি চরম নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। ফিলিস্তিন, ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশে নির্বিকারে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। এসব যুদ্ধ বিগ্রহ কবিতা সহে না। কবিতার মাধ্যমে আমরা গড়ে তুলবো প্রতিবাদের প্রাচীর। আজ যখন পৃথিবীর দেশে দেশে অশুভ শক্তির দাপটে নিরপরাধ মানুষ বিপন্ন- নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষের লাশের স্তূপ ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতার অহমিকা দেখাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। সেসময় আমাদের এ আয়োজন।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান সুলতান এবং ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য আসলাম সানী। উৎসবে উদ্বোধনের পর ভারত, নেপাল, ফিলিপাইন ও ইরানের আমন্ত্রিত কবিরা মুক্ত আলোচনা ও কবিতা পাঠ করে।
১ ও ২ ফেব্রুয়ারি দু'দিনব্যাপী এই উৎসবে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের অসংখ্য কবি অংশ নেন। এর মধ্যে রয়েছেন ভারতের কলকাতা থেকে সুবোধ সরকার, বিথী চট্টোপাধ্যায়, বিভাস রায় চৌধুরী, ত্রিপুরা হতে রাতুল দেব বর্মন, দীলিপ দাস, আকবর আহমেদ, আসামের কবি অনুভব তুলাসি এবং চন্দ্রিমা দত্ত। এছাড়াও ফিলিপাইনের কবি ও বর্তমানে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল আসান জুনিয়র, নেপালের চাবিলাল কপিলালসহ অনেকেই অংশ নিয়েছেন।